অরক্ষিত লেভেলক্রসিং
কর্তৃপক্ষের অনুমোতি ছাড়ায় পশ্চিমাঞ্চলে রেলে দিনে দিনে বাড়তে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের সংখ্যা। যে যেভাবে পারছে সেভাবেই রাস্তা নির্মাণ করে রেললাইন পার হচ্ছে। এমন অবৈধ রেলক্রসিং এর কারণে এখন বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। একইসঙ্গে বাড়ছে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণহানীর ঘটনা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগ নিয়ে গঠিত পশ্চিমাঞ্চল রেলপথের দুরত্ব এক হাজার ৫৬৮ কিলোমিটার। এ অঞ্চলের মোট গেইটের সংখ্যা এক হাজার ৫৮২টি (প্রকল্পসহ)। যার মধ্যে বৈধ গেইট এক হাজার ২৫৬টি। এছাড়াও প্রকল্প গেইট আছে ৩২৬টি। আর অবৈধ গেইটের সংখ্যা ৫৫০টি।
এসব গেইটের মধ্যে বৈধ এক হাজার ২৫৬টির মধ্যে মাত্র ৪৩৮টিতে গেইটম্যান নিযুক্ত রয়েছে। অবশিষ্ট ৮১৮টিতে গেইটম্যান নেই। আর অবৈধ ৫৫০টি গেইটও অরক্ষিত। হিসেব মতে দেখা যায় এক হাজার ৩৬৮টি গেইটে কোন গেইটম্যান নেই পশ্চিম রেলপথে।
রেলওয়ে বিভাগের গেইট ছাড়াও অন্যসব বিভাগেরও রেলক্রসিং আছে। অন্যসব বিভাগের মধ্যে অবৈধ গেইটের মধ্যে এলজিইডি’র বৈধ গেইটের সংখ্যা রয়েছে ৭৪৬টি। অবৈধ গেইটের সংখ্য ১৭৫টি। সড়ক ও জনপদের বৈধ গেইট ১২২টি। অবৈধ গেইটের সংখ্যা ৭টি।
রাজশাহীতে সিটি করপোরেশনের অধীনে বৈধ গেইটের সংখ্যা ৩৩টি। অবৈধ গেইটের সংখ্যা ৩২টি। উপজেলা পরিষদে বৈধ গেইটের সংখ্য ১৩টি। অবৈধ গেইটের সংখ্য ২টি। পৌরসভার মধ্যে বৈধ গেইটের সংখ্যা ১০১টি। অবৈধ গেইটের সংখ্যা ৫৯টি। ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে বৈধ গেইটের সংখ্যা ১৬১টি। অবৈধ গেইটের সংখ্যা ২০৪টি। অন্যান্য বৈধ গেইটের সংখ্যা ৮০টি। অবৈধ গেইটের সংখ্যা ৬১টি।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, অন্যান্য বিভাগগুলো তাদের প্রয়োজনে রেলক্রসিং তৈরি করে। নির্মাণ করার সময় রেলওয়েকে অবহিতও করা হয় না। এতে করে রেলকে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়তে হয়।
পশ্চিম রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সাত বছরে পশ্চিম রেলপথে ১ হাজার ১৯৯টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। ওসব দুর্ঘটনায় ২০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে রেলগেটে সংঘটিত দুর্ঘটনায় ১৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রাণহানীর সিংহভাগই ঘটেছে লেভেল ক্রসিং পার হওয়ার সময়।
রেলগেইটগুলোর বেশকিছু জায়গা ঘুরে দেখা যায়, কোথাও নিরাপত্তারক্ষী নেই আবার কোথাও গেটই নেই। রেলওয়ে সুত্র থেকে আরো জানা যায়, রেল লাইনের উপর দিয়ে যদি কেউ গেইট নিতে চায় তাহলে ১০ বছরের অর্থ জমা দিয়ে তারা গেইটটা নিবে অনুমোদন সাপেক্ষে।
কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, রেলওয়ে কিছুই জানতে পারে না। গেইট নির্মাণের পরে রেলওয়ে জানতে পারে। এতে রেলওয়েকে বিব্রত অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়। ইচ্ছে করলেও নানা কারণে সেসব গেইট পরে আর বন্ধ করা যায় না।
পশ্চিম রেলওয়ে সূত্র জানায়, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে নিজেদের চলাচলের সুবিধার জন্য যেখান সেখান রেলপথের ওপর দিয়ে অবৈধ রাস্তার নির্মাণ করা হচ্ছে। পরে সেগুলো অরক্ষিত হয়ে পড়ে। এইসব রেলক্রসিং দিয়েই বেশি দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।
পশ্চিম রেলের যে কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে ভয়াবহ হচ্ছে, চলতি বছর ২৪ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জে অরক্ষিত একটি রেলক্রসিংয়ে ভটভটি অতিক্রম করার সময় ট্রেনের ধাক্কায় তিনজন মাছ ব্যবসায়ীর মৃত্যু। চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে অদুরেই এ ঘটনা ঘটে। এর আগে ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর নীলফামারী সদরের বউবাজার রেলস্টেশন এলাকায় ট্রেনের নিচে কাটাপড়ে একই পরিবারের তিন শিশু চারজন নিহত হয়েছেন।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সাত বছরে এক হাজার ১৯৯টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। ওসব দুর্ঘটনায় ২০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে রেলগেটে সংঘটিত দুর্ঘটনায় ১৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রাণহানীর সিংহভাগই ঘটেছে লেভেল ক্রসিং পার হওয়ার সময়।
রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, প্রতিনিয়ত নিজেদের প্রয়োজনের ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি কিংবা অন্যান্য সংস্থা লেভেল ক্রসিং গেট সৃষ্টি করছে, যা অবৈধ। প্রতিনিয়ত এভাবে অবৈধ গেট সৃষ্ট হলে রাতারাতি সেখানে জনবল দেয়া রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সম্ভব না। অবৈধ লেভেল ক্রসিং যাতে তৈরি না হয় সেজন্য সবাইকে আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।