রেলপথের রূপদিয়া এলাকায় মাটি
ঢাকা-যশোর রেলপথ প্রকল্পের কল্যাণে ভাগ্য খুলে যাবে যশোর অঞ্চলের মানুষের। বিশেষ করে বদলে যাবে যশোরের রূপদিয়া অঞ্চল। এতে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বাড়বে মাথাপিছু আয়। যে কোন ভারি পণ্য আমদানি ও রফতানির সুযোগ কাজে লাগিয়ে নতুন আয়ের উৎস পাবে যশোর অঞ্চলের মানুষ। এ অঞ্চলে উৎপাদিত সব কৃষি ও শিল্পপণ্য পরিবহন, বিপণন সহজ হবে ফলে আঞ্চলিক বাণিজ্য সমৃদ্ধ হবে, সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে।
উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় নতুন কল-কারখানা চালু হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ ছাড়াও স্থানীয় জনগণ উন্নততর স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য খুব সহজেই রাজধানী ঢাকায় যেতে পারবেন।
যশোরে চার রেলস্টেশন ঘিরে পাল্টে যাচ্ছে দৃশ্যপট। হতে যাচ্ছে এক নব অধ্যায়ের সূচনা। জেলার বাঘারপাড়ার জামদিয়া ও পদ্মবিলায় হচ্ছে অত্যাধুনিক স্টেশন। আর সিংঙ্গিয়া-রূপদিয়া স্টেশন হচ্ছে সর্বাধুনিক ও নান্দনিক। এরই মধ্যে এই চার স্টেশন ঘিরে শুরু হয়েছে কর্মযজ্ঞ। পদ্মবিলায় হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন জংশন। এই রেলপথের ভূমি অধিগ্রহণের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। আবার কোথায় চলছে অবকাঠামো নির্মাণে তোড়জোড়।
পদ্মা সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, স্বপ্নের এ সেতুর ওপর দিয়ে রেল চলাচলের জন্য ঢাকার কমলাপুর থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। দীর্ঘ এ পথে থাকছে ২০টি অত্যাধুনিক রেলস্টেশন। এর মধ্যে যশোরেই রয়েছে চারটি। জামদিয়া ও পদ্মবিলায় হবে নতুন দুটি স্টেশন। এরই মধ্যে জমি অধিগ্রহণের যৌথ জরিপের কাজ শেষ হয়েছে।
কোথাও অধিগ্রহণ শেষে জমি মালিকদের টাকাও প্রদান করা হয়েছে। আর অল্প কিছু জমি অধিগ্রহণের কাজ বাকি ছিল, সেটা গত মে মাসে শেষ হয়েছে। সিংঙ্গিয়া-রূপদিয়া স্টেশনও হবে সর্বাধুনিক।
সূত্র জানায়, এসব স্টেশনে এক প্ল্যাটফরম থেকে অন্য প্ল্যাটফরমে যেতে ভোগান্তি থাকবে না। বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের ব্যবহারে উপযোগী হবে। বর্তমানে প্ল্যাটফরম নিচু থাকায় ট্রেনে উঠতে পোহাতে হয় নানা দুর্ভোগ। এসব স্টেশনে থাকবে ফুটওভারব্রিজ, চলন্ত সিঁড়ি ও লিফট। নারী ও পুরুষের জন্য থাকবে আলাদা টয়লেট সুবিধা।
নামাজের জায়গাসহ প্রতিবন্ধীদের জন্য থাকবে বিশেষ ব্যবস্থা। ফলে প্রতিবন্ধীরা কারও সহযোগিতা ছাড়াই নিরাপদে স্টেশন ব্যবহার করতে পারবেন। পদ্মা সেতুতে যুক্ত হওয়া যশোরের ৪টিসহ ২০টি স্টেশনই হবে আধুনিক ও নান্দনিক। আর এটা হলে বদলে যাবে ওই এলাকার দৃশ্যপট। অর্থনীতি ও যোগাযোগে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে।
এ ব্যাপারে যশোর সদরের বসুন্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম খান রাসেল বলেন, তার ইউনিয়নের মধ্যে পদ্মবিলায় আধুনিক রেল জংশন হচ্ছে। ফলে এখনই এলাকাটি বদলে যেতে শুরু করেছে।
জমির দাম বেড়ে গেছে। দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে এ জনপদের মানুষ। জেলার বাঘারপাড়ার জামদিয়ায় হচ্ছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের আরও একটি রেলস্টেশন। ক্ষণে ক্ষণে পাল্টে যাচ্ছে সেখানকার পরিবেশ। জামদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আরিফুল ইসলাম তিব্বত বলেন, রেলস্টেশন নির্মাণ ঘিরে চলছে কর্মযজ্ঞ। এ অঞ্চলের অর্থনীতি বদলে যাচ্ছে।
নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। বেড়ে গেছে ঘরভাড়া। যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান জানান, জমি অধিগ্রহণ প্রায় শেষের পথে। জমি মালিকদের টাকাও প্রদানও করা হয়েছে। অল্প কিছু জমি অধিগ্রহণ শেষের দিকে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার কমলাপুর থেকে গে-ারিয়া তৃতীয় ডুয়েলগেজ লাইন, ভাঙ্গা জংশনে ওভারহেড স্টেশন, কমলাপুরের টিটিপাড়ায় আন্ডারপাস, নড়াইলের তুলারামপুরে নতুন আন্ডারপাস এবং ভাঙ্গা স্টেশনে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে। যেসব স্টেশনে আন্ডারপাসের মাধ্যমে এক প্ল্যাটফরম থেকে অন্য প্ল্যাটফরমে যাওয়া যাবে, সেখানে লিফট ও চলন্ত সিঁড়ি থাকবে না। মাওয়া, পদ্মবিল, কাশিয়ানি, রূপদিয়া স্টেশনগুলোতে অপারেশনাল সুবিধা বাড়ানো হবে।
এ ছাড়া রেলস্টেশনের স্টাফসহ অন্যদের আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে ১০টি স্টেশনে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত রেসিডেন্স বিল্ডিং বা আবাসিক ভবন গড়ে তোলা হবে। এ স্টেশনগুলো হলোÑ নিমতলা, শ্রীনগর, মাওয়া, পদ্মা, শিবচর, ভাঙ্গা জংশন, লোহাগড়া, জামদিয়া, নড়াইল ও পদ্মবিলা জংশন।
পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক (ওয়ে এ্যান্ড ওয়ার্ক) আবু ইউসুফ মোহাম্মদ শামীম বলেন, ‘রেল সংযোগটি ঢাকার কমলাপুর থেকে শুরু হবে, এরপর নারায়ণগঞ্জে যাবে। গে-ারিয়া হয়ে চলে যাবে শ্যামপুরে। নারায়ণগঞ্জের পাগলা হয়ে ডান দিকে মোড় নেবে। সেখান থেকে বুড়িগঙ্গা পার হয়ে লাইন কেরানীগঞ্জে ঢুকবে। কেরানীগঞ্জ পার হয়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে জাজিরায় পৌঁছবে। প্রকল্পের নক্সা ও লক্ষ্য অনুযায়ী এ রুটে গতি থাকবে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার।