ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২

সফল কৃষি উদ্যোক্তা শাকিল

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২

সফল কৃষি উদ্যোক্তা শাকিল

পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পিছনে ছুটবে, চাকরি করবে! চাকরি না করলে লেখাপড়া বৃথা এমন ধারণাকে পাল্টে দিয়েছেন একজন শিক্ষিত তরুণ উদ্যোক্তা কৃষিবিদ শাকিল আহমেদ (২৬)। শাকিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করে চাকরির পিছনে না ঘুরে নিজেই গড়ে তুলেছেন ফার্মনেট.এশিয়া লিমিটেড-মিশ্র ফল ও সবজির প্রজেক্ট। টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার আটিয়া ইউনিয়নের গমজানি গ্রামের শিক্ষিত যুবক কৃষিবিদ শাকিল আহমেদ। শাকিল ওই গ্রামের আবদুল করিমের ছেলে। জানা যায়, ২০২০ সালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়ের কৃষি বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করেন শাকিল। করোনায় ঘরবন্দী হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। এদিকে পড়াশোন শেষ। আরেক দিকে করোনা হানা দিয়েছে সারাবিশ্বে। চিন্তায় পড়েন শাকিল। ভাবতে থাকেন ঘর বন্দী সময়টা কিভাবে কাজে লাগানো যায়। তখন তার মাথায় এলো আমি তো কৃষি বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করেছি। কৃষকের সন্তান! সময়টা নষ্ট না করে বাবার জমিতে চাষাবাদ শুরু করি। একপর্যায়ে নিজেই পৈতৃক ৪২ শতাংশ জমিতে শুরু করেন কোরিয়ান সবজি ‘স্কোয়াশ’ চাষ। মাত্র তিন মাসেই স্কোয়াশ বিক্রি করে প্রায় ৪০ হাজার টাকা লাভ করেন। পরে ওই জমিতে তরমুজ, শসা ও বাঙ্গি একসঙ্গে আবাদ করেন। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করায় খুব ভাল ফলন হয়। আশপাশের গ্রাম, এমনকি টাঙ্গাইল শহর থেকেও ক্রেতারা জমিতে এসেই ফল কিনে নেন। পরে তিনি ৮০ হাজার টাকার তরমুজ, ৭৫ হাজার টাকার শসা ও ২০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি করেন। এতে তাঁর উৎসাহ বেড়ে যায়। অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে চাষাবাদ বাড়াতে থাকেন। এখন তিনি ৪২ শতাংশ জমিতে স্কোয়াশ, ৪০ শতাংশ জমিতে ক্যাপসিকাম, ৫০ শতাংশ জমিতে মিশ্র ফল (পেঁপে, তরমুজ ও বিদেশি ফল) এবং ১২০ শতাংশ জমিতে ব্রুকলি রেড ক্যাভেজ, বাঁধাকপি, টমেটো, লাল শাক ও কচু আবাদ করছেন। নিজের অর্জিত শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে কৃষি প্রজেক্ট থেকে তিনি ব্যাপক সফলতা পাচ্ছেন। আশপাশের কয়েক গ্রামের শিক্ষিত বেকার যুবকরা আসছেন তার এ প্রজেক্ট পরিদর্শনে। তারাও চাকরির পেছনে না ছুটে এ ধরনের প্রজেক্ট করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। কৃষিবিদ শাকিল জানান, গত বছর আমি বিদেশী সবজি স্কোয়াশ, বিভিন্ন জাতের তরমুজ, শসা, মিশ্র ফসলের আবাদে সফল হওয়ার পরে আমি নতুন একটা উদ্যোগ নেই। সে উদ্যোগ ফার্মনেট এশিয়া। আমি বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অধিক লাভবান হই। পতিত জমিকে কিভাবে কাজে লাগানো যায়, সেই প্রযুক্তিগুলোকে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছি। সারা বাংলাদেশের কৃষকদের নিয়ে কাজ করার জন্য ফার্মনেট এশিয়া স্টাটাপ খুলেছি। এই স্টাটাপের মাধ্যমে আমি এখানে প্রায় ১২৫ শতাংশ জায়গায় বিভিন্ন মিশ্র ফল ও সবজি চাষাবাদ করেছি। টাঙ্গাইলে আগে কখনও হয়নি এমন বিদেশী ফল রকমেলন চাষ করেছি। সেটার ফল অনেক ভাল। এই জমিটাতে আমি প্রায় দশ রকমের বিভিন্ন ফল ও সবজি চাষাবাদ করছি। এখানে তিন কালারের তরমুজ আছে। একটা জমিতে পেঁপের বাগান করব। পেঁপে গাছ হতে হতে কিভাবে দশ-বারোটা ফসল করে নেওয়া যায় এমনটাই লক্ষ্য ছিল আমার। দেলদুয়ার উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, কৃষিবিদ শাকিল আহমেদ প্রায় ১২০ শতাংশ জমিতে ১০ রকমের উচ্চমূল্যের শাক-সবজি পর্যায়ক্রমে চাষ করছেন। তার পাশাপাশি প্রায় ৫ একর জমিতে উচ্চমূল্যের বিভিন্ন ফল ও সবজি চাষ করেছেন। তার এই চাষাবাদ দেখে তরুণ সমাজ চাষাবাদে আগ্রহী ও সম্পৃক্ত হচ্ছে। এভাবে শিক্ষিত তরুণ সমাজ কৃষি কাজে সম্পৃক্ত হলে অ ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কৃষিতে আরও সমৃদ্ধ হবে। শাকিলের এই কাজে দেলদুয়ার কৃষি অফিস সব সময় পাশে আছে। শাকিলের মতো আরও কোন তরুণ আধুনিক চাষাবাদে আগ্রহী হলে আমরা তাদের পাশে থাকব। -ইফতেখারুল অনুপম, টাঙ্গাইল

আরো পড়ুন  

×