ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১

সিনিয়র লাইব্রেরিয়ানসহ ৫টি পদ শূন্য

উডবার্ন গণ গ্রন্থাগারের বেহাল অবস্থা

প্রকাশিত: ১৯:৩২, ২৭ মার্চ ২০২১

উডবার্ন গণ গ্রন্থাগারের বেহাল অবস্থা

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়ার প্রাচীন উডবার্ন সরকারী গণ গ্রন্থাগার (পাবলিক লাইব্রেরি) চলছে লাইব্রেরিয়ান (গ্রন্থাগারিক) ছাড়াই। কর্মকর্তাসহ পদ নয়টি। ৫টি শূন্য। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা পাঠক সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছেন। লোকবলের অভাবে দুস্প্রাপ্য হাতে লিখা পুঁথিসহ পুরানো গুরুত্বপূর্ণ অনেক বই সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ করা যাচ্ছে না। ঠিকমতো নজরদারি হয় না। ক্যাটালগ না থাকায় অনেক পাঠক সহজে রেফারেন্স বই খুঁজে পান না। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে গণ গ্রন্থাগার অধিদফতরের আওতায় বগুড়াসহ পুরানো ১৯ জেলার সরকারী গ্রন্থাগারে লাইব্রেরিয়ান পদকে বিলুপ্ত করে সিনিয়র লাইব্রেরিয়ান পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এছাড়াও দেশের ৭১টি সরকারী গণ গ্রন্থাগারকে প্রযুক্তিতে রূপান্তরের কাজ শুরু হয়েছে। বগুড়া উডবার্ন সরকারী গণ গ্রন্থাগারকে ডিজিটাল ফর্মে নেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রযুক্তিতে অভিজ্ঞ লোকবল নিয়োগ না হলে ডিজিটাল ফর্মে উন্নীতকরণ করার পরও সেবার মান কতটা উন্নত হবে এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন পাঠক ও সুধীজন। কয়েকজন নিয়মিত পাঠক জানালেন এই লাইব্রেরির কার্যক্রম এখন এ্যানালগ পদ্ধতির। ব্রিটিশ শাসনামলে অবিভক্ত ভারতের পূর্ব বাংলার বগুড়া, রংপুর, যশোর ও বরিশালে লাইব্রেরি স্থাপিত হয় প্রায় পৌনে দু’শ’ বছর আগে। বগুড়ায় স্থাপিত হয় ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে করতোয়ার তীরে। ১৯০৮ সালে তদানীন্তন বাংলার লেফটেন্যান্ট গবর্নর স্যার জন উডবার্নের নামে নামকরণ হয়। ১৯৩০ সালে এক অগ্নিকাণ্ডের পর লাইব্রেরি এ্যাডওয়ার্ড পার্কে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৮৪ সালে গণ গ্রন্থাগার অধিদফতরের অধীনে বগুড়ার উডবার্ন লাইব্রেরি উডবার্ন সরকারী গণ গ্রন্থাগারে রূপান্তরিত হয়। ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর এ্যাডওয়ার্ড পার্কের বাইরে সেউজগাড়ি সড়কের ধারে বহুতল ভবনে স্থানান্তরিত হয়। নতুন কাঠামোর কর্মকর্তা পর্যায়ের দুইটি পদের মধ্যে সিনিয়র লাইব্রেরিয়ান পদটি প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড। সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদ দ্বিতীয় শ্রেণীর। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী পর্যায়ে আছে লাইব্রেরি এ্যসিসটেন্ট, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, ক্যাটালগার। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হলেন লাইব্রেরি এ্যাটেনডেন্ট, চেক পোস্ট এ্যাটেনডেন্ট, বুক সর্টার ও নৈশপ্রহরী। বর্তমানে দ্বিতীয় শ্রেণীর পদের দুইজন এ্যাসিসটেন্ট লাইব্রেরিয়ান, তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী লাইব্রেরি এ্যাসিসটেন্ট আনিসুল হক এবং চতুর্থ শ্রেণীর দুইজন কর্মচারী লাইব্রেরি পরিচালনা করছেন। এ্যাডওয়ার্ড পার্ক থেকে লাইব্রেরি নতুন ভবনে যাওয়ার আগে প্রায় ৩০ হাজার বই ছিল। এরমধ্যে নতুন ভবনে এসেছে ৮ হাজার ২শ’ ৫২টি বই। বাকিগুলো উদ্ধার করা যায়নি। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের বইয়ের সংখ্যা ৫৪ হাজারেরও বেশি। প্রতিবছর গণ গ্রন্থাগার অধিদফতর থেকে বই পাঠানো হয়। এ পর্যন্ত এসেছে প্রায় আড়াই হাজার বই। লাইব্রেরির নিয়মিত পাঠক সদস্য ২৯৯ জন। প্রতিদিন গড়ে ২৫০ জন পাঠক বই পড়তে আসেন। লাইব্রেরিতে দুষ্প্রাপ্য হিরণ কাশিপুর উপাখ্যান, গোবিন্দ কথামৃত, পদ্মপুরান হস্তলিখিত পুঁথি, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটেনিকার সকল খণ্ড, এইচ জি ওয়েলসের ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রি, টয়েনবির হিস্ট্রি অব দ্য ওয়ার্ল্ডসহ প্রাচীন গুরুত্বপূর্ণ বই আছে। আধুনিকায়নের পালায় লাইব্রেরিতে পাঠকের জন্য দুইটি ডেস্কটপ কম্পিউটার এবং প্রশাসনিক কাজের দুইটি কম্পিউটার সংযোজিত হয়েছে। স্ক্যানার, ওয়াইফাই সংযোগ এবং ৭২ ঘণ্টা ব্যাকআপের উন্নত সোলার প্যানেল সংযুক্ত আছে। পাঠকরা বলছেন প্রযুক্তির অগ্রসরতায় আরও কয়েকটি কম্পিউটার দরকার। দেশের বিভাগীয় শহরের লাইব্রেরিগুলোতে মোবাইল অপারটের রবি পাঠকদের জন্য দশটি করে কম্পিউটার দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে। পাঠকরা বলছেন উডবার্ন সরকারী গণ গ্রন্থাগারে লোকবলের অভাবে তারা প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ক্যাটালগ না থাকায় বই খুঁজতেও অসুবিধা হয়। এই বিষয়ে দায়িত্ব প্রাপ্ত আনিসুর রহমান জানালেন, কথা আছে ডিজিটাল ক্যাটালগ স্থাপিত হবে। বললেন লোকবলের অভাবে লাইব্রেরি পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়েছে। পাঠক সেবা, বই সংরক্ষণ ও প্রশাসন সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। চারতলা ভবনের লাইব্রেরির নিচ তলায় মিলনায়তন, দোতলা ও তিন তলায় পাঠ কক্ষ ও চতুর্থ তলায় মজুদ পুস্তক। হস্তলিখিত পুঁথিসহ প্রাচীন বইগুলো সংরক্ষণের জন্য একজন দক্ষ রসায়নবিদ থাকা দরকার। বইগুলো সঠিক সংরক্ষণ করে স্ক্যান করে কম্পিউটারে রাখা যায়। সিনিয়র লাইব্রেরিয়ান, সহকারী লাইব্রেরিয়ানসহ প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে কোন কিছুই ঠিকমতো করা যাচ্ছে না। সর্বশেষ লাইব্রেরিয়ান ছিলেন মোঃ রোকনুজ্জামান। তিনি ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে বদলি হয়ে অন্যত্র যান।
×