
নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঁশখালী ॥ চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গন্ডামারা এলকায় কয়লা বিদ্যুৎ নির্মাণ প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনার প্রতিবাদে ‘গন্ডামারা বাঁচাও’ আন্দোলনের ব্যানারে আগামীকাল বুধবার প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছে একটি সংগঠন। সমাবেশটি গন্ডামারা বাজারের কাছে মাঠে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। এই সংগঠনটির আন্দোলন কয়লা বিদ্যুৎ নির্মাণ বিরোধী আন্দোলন নয়। শুধুমাত্র বাঁশখালীর গন্ডামারাবাসীর জানমাল রক্ষা ও নিরাপত্তার দাবীর আন্দোলন বলে জানা গেছে সংগঠনটি সূত্রে।
এই সংগঠনের কার্যক্রম গত কয়েকদিন পূর্বেই শুরু হয়। সংগঠনটির কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ২০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিও গঠন করা হয়েছে। বসতভিটা রক্ষা কমিটির আন্দোলন ১৫ দিনের জন্য স্থগিত ঘোষণা করার পর ফের এই সংগঠনটি আবার সমাবেশের ডাক দেয়ায় জনমনে চাঞ্চল্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সংগঠনটির উপদেষ্টা ও চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বুধবারের সমাবেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে জনকন্ঠকে জানান, বাঁশখালীর গন্ডামারাবাসীকে রক্ষার জন্য আমাদের এই আন্দোলন। পাশাপাশি কয়লা বিদ্যুৎ নির্মাণ পরিবেশ ও জীবনের উপর কতটুকু ক্ষতিকর বিষয়টি সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া ঐ এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় দায়েরকৃত পুলিশের পক্ষ থেকে মামলায় নিরিহ লোকদের আসামী করা হয়েছে। যারা ঘটনার সাথে জড়িত নয়। তাদেরকে বাঁচানোর আন্দোলন। পুলিশি ভয়ে আহত লোকজন চিকিৎসা নিতে পারছেনা। গুটিকয়েকজন চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তাদেরকেও পুলিশ হ্যান্ডকাপ পরিয়ে রেখেছে। তাই নিরিহ লোকদের হয়রানী থেকে মুক্ত করার এই আন্দোলন আমাদের। তিনি ঘটনার সাথে জড়িত ও সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে আন্দোলনে নামিয়ে হত্যা করেছে তাদেরকে চিহ্নিত করে অচিরেই গ্রেফতার পুর্বক আইনের আওতায় নিয়ে আসারও দাবী জানান। ফের সমাবেশকে কেন্দ্র করে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ চলছে বলে জানা যায়।
স্থানীয় ও সংগঠন সূত্রে জানা যায়, কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকে কেন্দ্র করে গত ৪ এপ্রিল সোমবার উপজেলার গন্ডামারায় ত্রিমুখী সংঘর্ষে ৪ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহতের ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এই ঘটনাকে বিএনপি পুঁজি করে বৃহদাকারের আন্দোলন সৃষ্টির পাঁয়তারা করেছিল। ঘটনা শুরুর পর হতে অদ্যাবধি পর্যন্ত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতা লেয়াকত আলী গন্ডামারা বসতভিটা রক্ষা কমিটির নামে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল। শুক্রবার সন্ধ্যায় এই সংগঠনটির আন্দোলন ১৫ দিনের জন্য স্থগিত ঘোষণা করে। বসতভিটা রক্ষা কমিটির আন্দোলন ছিল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ বিরোধী। তবে এই কমিটির পাশাপাশি গন্ডামারা বাসীর জানমাল রক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে “গন্ডামারা বাঁচাও” আন্দোলন নামে আরেকটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে।
এই কমিটিতে সংঘর্ষের ঘটনায় একই পরিবারের দুই ভাই মর্তুজ আলী ও আনোয়ার ইসলামের বড় ভাই বদি আহমদকে আহব্বায়ক করে ২০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। এই সংগঠনটি বুধবার তাদের সংগঠনের মূল দাবী দাওয়া ও আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানা যায়। গন্ডামারা এলাকার একটি পক্ষের আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা হলেও অপর পক্ষ ফের সমাবেশ ডাকায় এলাকার সাধারণ জনগণের মাঝে কৌতুহল ও চাঞ্চল্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
এই ব্যাপারে বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ স্বপন কুমার মজুমদার জানান, ‘গন্ডামারা বাঁচাও’ আন্দোলনের ব্যানারে সমাবেশের অনুমতি নেননি। তবে এলাকায় মাইকিং ও প্রচার চালাচ্ছে বলে শুনেছি। বিষয়টি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তাদের নির্দেশক্রমে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
ফের সমাবেশ এর ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রকল্প সহকারী বাহাদুর আলম হিরণ জানান, এস.আলম গ্রুপের পক্ষ থেকে বিষয়টি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। যারা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে আন্দোলন সমাবেশ এর ডাক দিয়েছে তাদের সবাই আইনের নজরদারীতে রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, বাঁশখালীর গন্ডামারা এলাকায় এস.আলম গ্রুপ ও চায়না কোম্পানী যৌথ উদ্যোগে ২৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩২০ মেঘাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছিল। কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রনির্মাণকে কেন্দ্র করে এলাকায় সোমবার ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষের ঘটনায় ৪ জন নিহত ও পুলিশের ১৩ সদস্য সহ কমপক্ষে আহত হয়েছে ৬০ জন।