মোরসালিন মিজান ॥ সময়টা, কী আশ্চর্য, বদলে গেছে! অনাদিকাল থেকে সমাজবদ্ধ মানুষ। অথচ এখন ভিন্ন বাস্তবতা। যে যার ঘরে ঢুকে দরজায় খিল দিয়েছেন। মানতেই হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব। হ্যাঁ, প্রাণঘাতী করোনার প্রাদুর্ভাবে বিশ্বব্যাপী এই পরিবর্তন। একই কারণে কারও মধ্যে কোভিড ১৯ -এর উপসর্গ দেখা দিলে তার পক্ষে প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ ও প্রাথমিক চিকিৎসা পাওয়া সহজ হচ্ছে না। দুঃখজন অনেক খবরও আসছে। এ অবস্থায় বিকল্প হিসেবে টেলিমেডিসিন সেবার দিকে ঝুঁকছেন রোগীরা।
টেলিমেডিসিন বা টেলি হেল্থ সেবা, না, একদমই নতুন কিছু নয়। উন্নত দেশগুলোতে খুবই পরিচিত। বাংলাদেশেও চর্চাটি কম বেশি ছিল। আছে। সে ধারাবাহিকতায় এ বছরই চালু হয় ‘ডাক্তার দেখাও’ এ্যাপটি। ডিজিটাল এই মাধ্যমে সব ধরনের চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়ে আসছে। এখন অন্যান্য রোগী দেখার পাশাপাশি বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে করোনায়। দূর-দূরান্তে, এমনকি বিদেশে বসবাস করা বাঙালীরা এ্যাপলিকেশনটি তাদের স্মার্টফোনে ইনস্টল করতে পারছেন। ভিডিও কলে সরাসরি কথা বলতে পারছেন ডাক্তারের সঙ্গে। ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত থাকছেন ডাক্তারাও।
ইতোমধ্যে আলোচনায় চলে আসা এ্যাপটি পরিচালনা করছে দূরবীন ল্যাবস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ল্যাবসের ইঞ্জিনিয়ারিং ডিরেক্টর মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘ডাক্তার দেখাও’ প্লাটফর্মটি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও মেশিন লার্নিংসহ আরও অনেক কাটিং এজ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। এটি বিশ্বের সমসাময়িক অনেক প্লাটফর্মের চেয়ে উন্নত এবং সমৃদ্ধ। তিনি জানান, এপিআই ব্যবহার করে যে কোন সার্ভিস প্রোভাইডার ‘ডাক্তার দেখাও’র সঙ্গে সহজেই নিজেদের সেবা ইন্টিগ্রেট করতে পারবেন।
দূরবীন ল্যাবসের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মাদ আদনান। তিনি জানান, ২০ জনের একটি চিকিৎসক দল আছে তাদের। ফোন করে লম্বা সময় অপেক্ষা না করেই তাদের পাওয়া যাচ্ছে। মাত্র ১০০ টাকা খরচ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা নিতে পারছেন রোগীরা। পরবর্তীতে আরও কোন পরামর্শের প্রয়োজন হলে, বিনা টাকায় সেটি দেয়া হচ্ছে।
ল্যাবসের কো-ফাউন্ডার তৌহিদুজ্জামান জানান, ভিডিও কন্সাল্টেশন ছাড়াও, রোগীরা ই-প্রেসক্রিপশন ও ইলেক্ট্রনিক মেডিক্যাল রেকর্ডের সুবিধা পাচ্ছেন এ্যাপটি থেকে। এসব কারণে বর্তমানে প্রতি মিনিটে ১৫ থেকে ২০ জন এটি ইনস্টল করছেন। গুগলের নানা হিসাব নিকাশেও এগিয়ে আছে ‘ডাক্তার দেখাও।’ টপ ট্রেন্ডিং এ্যাপে এটির অবস্থান দ্বিতীয় বলে জানান তিনি।
‘ডাক্তার দেখাও’ এ্যাপটি সাধারণ নিয়মেই গুগল প্লেস্টোর থেকে ডাউনলোড করা যাচ্ছে। নিজস্ব এ্যাকাউন্ট খোলার পর সাইন ইন করতে হবে। চিকিৎসার সুবিধার্থে রোগীর প্রোফাইলে প্রয়োজনীয় তথ্য সংযুক্ত করতে হবে। এরপর হোম পেজে এ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করা যাবে। বাটন প্রেস করে জেনারেল ফিজিশিয়ান সিলেক্ট করা যাবে। নিজের সুবিধেমতো সময়ে ডাক্তারের এ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়া যাবে। নির্দিষ্ট সময়ে এ্যাপ চালু করে ‘কল করুন’ বাটন চেপে কথা বলা যাবে ডাক্তারের সঙ্গে। আরও জানতে www.doctordekhao.com.bd এই ঠিকানায় ভিজিট করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সরাসরি এ্যাপ নামানো যাবে bit.ly/2UXvytZ এই লিঙ্ক থেকে।
জানা যায়, অন্য পেশার হয়েও, সামাজিক দায় ও মানবিকতার বোধ থেকে দূরবীন ল্যাবসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন কাজী আনিসুল মুকিত। ল্যাবসের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘ডাক্তার দেখাও’ আমাদের একটি সচেতন উদ্যোগ। এটি অত্যাধুনিক তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর টেলিমেডিসিন এ্যাপ্লিকেশন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা চিন্তা করলে এ্যাপটির প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি উপলব্ধি করা যায়। তারা উন্নত চিকিৎসা থেকে প্রায়শই বঞ্চিত হচ্ছেন। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে শহুরে মানুষও ঘর থেকে বের হতে পারছে না। সংক্রমণ ব্যাধিটি নিয়ে নানা শঙ্কা সংশয়ে ভুগছেন। বিভ্রান্তিতে পড়ে যাচ্ছেন। আমরা তাদের সেইসব বিভ্রান্তি শঙ্কার বিপরীতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অনুমোদনক্রমেই কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। বলেন, আমরা এ্যাপটি নিয়ে প্রচারে তেমন যাইনি। যাওয়া হয়নি। তার পরও প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। করোনার ভয়াবহতা মাথায় রেখে আরও বেশি মানুষকে সেবা দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বলার অপেক্ষা রাখে না, এ ধরনের সেবা বর্তমান পরিস্থিতিতে খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। নানা ঝামেলা এবং সংক্রমণের ঝুঁকি এড়িয়ে টেলিমেডিসিন সেবা দেয়া ও নেয়া যায়। শুধু এ কারণেই সেবাটি আরও বাড়ানো এখন সময়ের দাবি বলেই মনে করা হচ্ছে।