অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চীনে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমে আসায় নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থিরতা দূর হচ্ছে। ধীরে ধীরে স্বস্তি ফিরে আসছে সব ধরনের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও। বিশেষ করে দেশী পেঁয়াজের দাম ৪০-৫০ টাকার মধ্যে নেমে আসায় স্বল্প আয়ের ভোক্তারাও খুশি। কমেছে আদা, রসুন, মসুর ডাল, ছোলার দাম। তবে এ সপ্তায় দাম বেড়েছে চিনি, গুঁড়োদুধ, পামওয়েল তেল ও শুকনো মরিচের। অন্যদিকে, চাল, আটা, ডিম, ব্রয়লার মুরগি ও মাছ-মাংসের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। কমে এসেছে মাস্ক, স্যানিটাইজার ও হ্যান্ডওয়াশের দাম। এছাড়া মৌসুমী কয়েকটি সবজি বাড়তি দামে বিক্রি হলেও বেশিরভাগ শাক-সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, ফার্মগেট কাঁচাবাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট ও মিরপুর সিটি কর্পোরেশন বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবিও অধিকাংশ পণ্যের দাম কমার তথ্য দিয়েছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েকদিনের করোনা আতঙ্কের ভীতি নেই ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে। এর আগে রবিবার ঢাকায় ইতালি ফেরত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ভোক্তারা হুজুগে পাগলের মতো বাজার থেকে বিভিন্ন পণ্য কিনে নিয়েছেন। ওই সুযোগে অনেক ব্যবসায়ী বাজারে নিত্যপণ্যসহ বিভিন্ন সামগ্রীর দাম বাড়িয়ে দেয়। সেই সময় ১০০ টাকার হ্যান্ডওয়াশ ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ভোগ্যপণ্য বিশেষ করে চাল, ডাল, আটা ও মাছ-মাংসের মতো পণ্যের মজুত বাড়িয়েছে অনেক ক্রেতা। কিন্তু শুক্রবার বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। ক্রেতাদেরকে চাহিদার অতিরিক্ত পণ্য কিনতে দেখা যায়নি। ব্যবসায়ীদের মধ্যেও পণ্য মজুত করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়নি। ফলে স্বাভাবিক গতিতে বাজারে কেনাকাটা হয়েছে।
কাওরান বাজারে নিত্যপণ্যের কেনাকাটা করছিলেন পূর্ব নাখাল পাড়ার বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, পেঁয়াজ, রসুনসহ অধিকাংশ পণ্যের দাম কম। এছাড়া নতুন করে মাছ-মাংসের দাম বাড়েনি। সবজির বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। তিনি বলেন, এটাই বাজারের স্বাভাবিক চরিত্র। কিন্তু গত রবিবারের পর বাজারে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ছিল। সবাই হুজুকে বিভিন্ন পণ্য বাজার থেকে চাহিদার তুলনায় বেশি কিনে নিয়েছেন। এ কারণে বেশকিছু পণ্যের দাম বেড়েছিল। ক্রেতারা পাগলের মতো কেনাকাটা না করলে সব সময় বাজার স্থিতিশীল থাকবে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, কিছু হলেই হুজুগে কেনাকাটা শুরু করে সবাই। আর এর খেসারত দিতে হয় ভোক্তাদের। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, তার পাশের ফ্ল্যাটের প্রতিবেশি গত সোমবার ১০টি হ্যান্ডওয়াশ কিনেছেন। অথচ দুই মাসেও একটি হ্যান্ডওয়াশ শেষ করা যায় না। ওই ভদ্রলোক বাজার থেকে ভোগ্যপণ্যও বেশি করে কিনে নিয়েছেন। তবে মজার বিষয় হলো এখন তিনি আফসোস করছেন।
এদিকে, পেঁয়াজের দাম কমে এখন দেশীটি ৪০-৫০, আমদানিকৃতটি ৫০-৬০, রসুন দেশীটি ৭০-৮০, আমদানিকৃতটি ১৩০-১৪০, আদা ১২০-১৪০, মসুর ডাল বড় দানা ৬৫-৭০, মসুর ডাল মাঝারি দানা ৭০-৮০, ছোলা ৬৫-৭৫, পামওয়েল খোলা প্রতিলিটার ৭২-৭৫, পামওয়েল সুপার ৮০-৮২, চিনি ৬৫-৭০, ডিপ্লোমা ৬২০-৬৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ায় ভোক্তাদের স্বস্তি সবচেয়ে বেশি। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস অর্থাৎ গত সাত মাস ধরে উচ্চমূল্যে ভোক্তাদের এই পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে। তবে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। দেশী পেঁয়াজের উৎপাদন ও ফলন ভাল হয়েছে। একই সঙ্গে আমদানি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আর এ কারণে পেঁয়াজের দাম কমে গেছে। বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ইলিশের সরবরাহ রয়েছে। এছাড়া দেশীয় মাছের যোগান ভাল। তবে এসব মাছের দাম কমা উচিত বলে মনে করেন ভোক্তারা। প্রতিকেজি ইলিশ ৭০০-৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গরু ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।