নিজস্ব সংবাদদাতা, কেশবপুর ॥ নওরীন সাদেককে ঘিরে স্বপ্ন দেখছেন কেশবপুরবাসি। পিতা-মাতার অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করার লক্ষ্যে স্থায়ীভাবে কেশবপুরে থাকতে চান সাবেক শিক্ষামন্ত্রী প্রয়াত এ এস এইচ কে সাদেক ও সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী সদ্য প্রয়াত ইসমাত আরা সাদেক এমপি’র মেয়ে নওরীন সাদেক। বাপ-দাদার শিকড় কেশবপুরেই বাস করবেন নওরীন। নওরীন সাদেকের এ সিদ্ধান্তে তাকে ঘিরে স্বপ্ন বোনা শুরু করেছে কেশবপুরের আপামর জনগণ। সমবেদনা জানানোর পাশপাশি দাবি ওঠেছে রাজনীতিতে পিতা-মাতার শুন্যস্থান পূরন হবে নওরীন সাদেকের মাঝে।
নওরীন সাদেক দীর্ঘ স্বাক্ষাৎকারে জানান, বাবা এ এস এইচ কে সাদেকের মতোই মৃদুভাষী, শান্ত ও ধৈর্যশীল নওরীন সাদেক। চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি নওরীন সাদেকের মাতা বেগম ইসমাত আরা সাদেক এমপি রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। মায়ের লাশ নিয়ে জানাজার জন্য বড়ো ভাই তানভির সাদেকের সাথে কেশবপুরে আসেন তিনি। এ সময় তাকে দেখে আগামীর সম্ভাবনার ইঙ্গিত খুঁজে পান উপস্থিত কেশবপুরের জনগণ। কেশবপুরের রাজনীতিতে নওরীন তার বাবা-মায়ের উত্তরসূরি হতে পারেন-এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও স্ট্যাটাস দিচ্ছেন অনেকেই। সদ্য শূন্য হওয়া যশোর-০৬ কেশবপুর আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন এলাকার আপামর জনসাধারণ। কেশবপুরের সাধারণ জনগণ নওরীনকে রাজনীতিতে চাচ্ছেন। তার মাঝেই নির্লোভ, নির্মোহ ও সৎ সাদেক পরিবার খুঁজে পেতে চাচ্ছেন সাধারন জনতা। কেশবপুরের সর্বস্তরের লোকজন মুখে শোনা যাচ্ছে, নওরীন সাদেকই হতে পারেন কেশবপুরের রাজনীতিতে সাদেক পরিবারের যোগ্য উত্তরসূরি। তার মধ্যে প্রয়াত পিতা-মাতার অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ও দেশপ্রেম স্পষ্ট।
নওরীন সাদেকের জন্ম কুমিল্লা শহরে। আওয়ামী পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় ছোটবেলা থেকেই জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান তার হৃদয়ে। বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের ইতিহাস সম্পর্কে পড়াশোনা করেছেন। বাংলাদেশ এবং মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে রয়েছে নওরীন সাদেকের সুস্পষ্ট জ্ঞান। উচ্চতর শিক্ষার জন্য আমেরিকা থেকে তিনি আর্কিটেকচারের ওপর অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। বাবা এ এস এইচ কে সাদেক মারা যান ২০০৭ সালে। এরপর মা ইসমাত আরা সাদেক ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। গত সংসদীয় নির্বাচনে পুনরায় ইসমাত আরা সাদেক এমপি মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হন। চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি ইসমাত আরা সাদেক অসুস্থ হয়ে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি হন। অসুস্থ মায়ের শুশ্রƒষার জন্য আমেরিকার কর্মস্থল ছেড়ে দেশে আসেন নওরীন সাদেক। আশা ছিল উন্নত চিকিৎসায় অচিরেই পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে আবার তার মা কেশবপুরের রাজনীতিতে ও উন্নয়নে আগের মতোই ভূমিকা রাখবেন। কিন্তু সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে অনন্তের পথে পাড়ি জমান কেশবপুরের আন্টি হিসেবে পরিচিত বেগম ইসমাত আরা সাদেক।
মায়ের লাশ নিয়ে নিজের শেকড় কেশবপুরের মাটিতে ফিরে নওরীন সাদেক অনেকটা অবাক হন। কেশবপুরের মানুষ যে তার বাবা-মাকে এতটা ভালোবাসে সেটি তার জানা ছিল না। ঢাকা থেকে মায়ের লাশ নিয়ে কেশবপুরে হেলিকপ্টারে করে অবতরণের পর শোকার্ত হাজারো নেতাকর্মী আর সাধারণ মানুষের আহাজারি দেখে নওরীনের চোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকে। কেশবপুরে মায়ের জানাজায় কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতি ও কান্না নওরীন সাদেকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তিনি আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। বক্তব্য দিতে গিয়ে অঝরে কেঁদেছেন। কেশবপুরের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সাধারণ জনগণের সাদেক পরিবারের প্রতি আবেগ, ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞবোধ নওরীনকে মুগ্ধ করে। সেদিনই মনে মনে সিদ্ধান্ত নেন তিনি কেশবপুরবাসির পাশে থেকে বাবা-মায়ের স্মৃতি আঁকড়ে থাকবেন বাকি জীবন।
নওরীন সাদেক ইতোমধ্যে কেশবপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘুরে ঘুরে দলীয় নেতাকর্মী এবং সাধারণ জনগণের সাথে কথা বলছেন। সবার কাছে বাবা-মায়ের জন্য দোয়া চেয়েছেন। পাশাপাশি জনগনের কাছে আহবায়ন করেছেন, “আপনারা যদি চান তাহলে আমি আপনাদের মাঝে থাকতে চাই।” তিনি কেশবপুরের প্রতিটি ইউনিয়রে গিয়ে কথা বলার পর কেশবপুরের জনগন তাকে এমপি হিসেবে পেতে চায় বলে দাবি তুলেছে। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে নওরীন সাদেকের ছবি দিয়ে ব্যাপক প্রচারও চলছে। উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সকল সংগঠনের পক্ষ থেকে আসন্ন উপনির্বাচনে নওরীন সাদেকের মনোনয়ন দিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়ে মিছিল-সমাবেশ করা হচ্ছে। বিশেষ করে তরুন প্রজন্ম এবং মহিলাদের কাছে নওরীনের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশী।
নওরীন সাদেক জানান, আমি দীর্ঘদিন ধরেই কেশবপুরের সাধারণ জনগণের জন্য কাজ করার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলাম। আপনারা দেখেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি আমার সদ্য প্রয়াত মা ইসমাত আরা সাদেক এমপি’র পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় মায়ের সাথে বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়েছি। উপজেলার তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছি। এছাড়া বিগত সময়ে নিয়মিত কেশবপুরের সাধারণ জনগণের খোজ খবর রেখেছি। মূলত আমার পিতা- মাতার কাছ থেকে জনগণের জন্য কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। বাবা-মায়ের প্রিয় কেশবপুরের উন্নয়ন ধরে রাখতে এবং তাদের কেশবপুর নিয়ে যে ভাবনা ছিল সেটা বাস্তবায় করতে আমি কেশবপুরবাসির পাশে থাকতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার বাবা-মাকে অনেক ভালবেসে কেশবপুবাসির উন্নয়নের সুযোগ দিয়েছিলেন। আমিও আশা করি মাননীয় দেশনেত্রী প্রধানমন্ত্রী আমাকেও মনোনয়ন দিয়ে কেশবপুরের মানুষের পাশে থাকার সুযোগ করে দেবেন।