সংসদ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের সিনিয়র নেতারা বিএনপিকে অস্বাভাবিক রাজনীতির পথ ছেড়ে স্বাভাবিক রাজনীতির পথে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, অগ্নিসন্ত্রাসী-গ্রেনেড হামলাকারী-সাম্প্রদায়িক জঙ্গীগোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষক বিএনপিকে দেশের জনগণ আবারও প্রত্যাখ্যান করেছে। পাকিস্তানপন্থীর রাজনীতি তথা সাম্প্রদায়িক- মৌলবাদী-জঙ্গীবাদী-সন্ত্রাসবাদী রাজনীতি ও তাদের পৃষ্ঠপোষক জামায়াত-বিএনপিকে রাজনীতির মাঠ থেকে চিরতরে বিদায় করতে হবে। এদের প্রতি ন্যুনতম ছাড় ও নমনীয়তা হওয়ার কোন সুযোগ নেই। বিএনপি-জামায়াত সাম্প্রদায়িক-জঙ্গীবাদ-মৌলবাদ উৎপাদন পুনরুৎপাদনের কারখানা চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে।
স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রবিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তাঁরা এসব কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সাবেক মন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, জাসদ সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, সরকারি দলের ইকবাল হোসেন অপু, সুবর্ণা মোস্তফা, বেগম রত্না আহমেদ, বদরুদ্দোজা মো. ফরহাদ হোসেন, বেগম আদিবা আনজুম মিতা ও গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ’৭৫-এর খুনীরা মনে করেছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে তাঁর নাম বাঙালির হৃদয় থেকে মুছে ফেলবে। কিন্তু খুনীদের এই ষড়যন্ত্র যে কত ভুল ছিল এই মুজিববর্ষে প্রমাণ হয়েছে। কারণ বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক এবং অভীন্ন। তিনি বলেন, সকল ষড়যন্ত্র ও রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে দেশকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন উন্নয়নের মহাসড়ক দিয়ে। পিতা দিয়েছেন স্বাধীনতা, কন্যা শেখ হাসিনা দিচ্ছেন দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ভয়াল অগ্নিসন্ত্রাস, নাশকতা, দেশকে জঙ্গী রাষ্ট্রে পরিণত করার অপচেষ্টা এবং পাঁচবার দুর্নীতিতে দেশকে চ্যাম্পিয়ন করার দুঃশাসন দেশের মানুষ কোনদিন ভুলে যাবে না। বিএনপি একদিকে বলে অবৈধ সরকার, অন্যদিকে সংসদে বসে সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছে। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে বিদেশী দুতাবাসে গিয়ে বিএনপি দেশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে। বিএনপির উচিত বিদেশীদের কাছে মিথ্যা নালিশ না করে অতীত কৃতকর্মের জন্য দুঃখপ্রকাশ করে জনগণের কাছে যাওয়া। যতদিন শেখ হাসিনার হাতে থাকবে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ।
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, সিটি নির্বাচনে বিএনপি দাবী করেছিল তাদের প্রার্থীর পক্ষে নাকি জনজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে! কিন্তু ফলাফল ঘোষণার পর তাদের পুরাতন বদঅভ্যাস অনুযায়ী ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে হরতাল ডেকেছে। কিন্তু হরতালে সবকিছু স্বাভাবিক। বিএনপির এই হরতাল তাদের ভুল ও ব্যর্থ রাজনীতি ঢাকার মুখ রক্ষার হরতাল। তিনি বলেন, বিএনপি গত ১১ বছরে অন্তর্ঘাত, জঙ্গী ও আগুণসন্ত্রাসের অপরাজনীতি ব্যর্থ হবার পর তারা মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানোর অপরাজনীতি শুরু করেছিল। সেটা ব্যর্থ হবার পর নির্বাচন আসলেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নি¤œচাপ তৈরির আশা নিয় নির্বাচনকে ব্যবহার করে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করে চক্রান্তের ঘূর্ণিঝড় তৈরি সরকার উৎখাতের চেষ্টা করেছে। সেই চেষ্টা সিটি নির্বাচনেও ব্যর্থ হয়েছে। আমরা আশা করি, এই অস্বাভাবিক রাজনীতির পথ ছেড়ে বিএনপি নির্বাচনকে নির্বাচন হিসেবে দেখে স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফিরে আসবে।
তিনি বলেন, জাতীয় উন্নয়ন-অগ্রগতি-সমৃদ্ধির জোয়ার বইছে দেশে। বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম প্রবৃদ্ধি অর্জনের দেশ। সব সূচকে বাংলাদেশ দৃঢ় গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। তবে দুর্নীতির দুষ্টচক্র আমাদের জন্য অভিশাপ, বিরাট চ্যালেঞ্জ। উন্নয়নের সুফল খেয়ে ফেলা দুর্নীতির উঁইপোকা ও ইঁদুরগুলোকে বিষ দিয়ে মারতেই হবে। দুর্নীতির দুষ্টচক্র ধ্বংস করতেই হবে। ক্ষমতার অপব্যবহারকারী-দুর্নীতিবাজ-লুটেরারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে না- তা প্রমাণ করতেই হবে। ব্যাংক লুটেরা- শেয়ারবাজার লুটেরারাও ধরাছোঁয়ার বাইরে না- সেটাও প্রমাণ করতে হবে।
সাবেক এই তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, লুটেরা-দুর্নীতিবাজ অফিসার, অসৎ রাজনীতিবিদদের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ত্রিমুখী অভিযান পরিচালনা করতে হবে। দুর্নীতি-ক্ষমতার অপব্যবহার, লুটপাটের দুষ্টচক্র ধ্বংস করতে সুশাসন ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতেই হবে। আর পাকিস্তানপন্থীর রাজনীতি তথা সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী-জঙ্গীবাদী-সন্ত্রাসবাদী রাজনীতি ও তাদের পৃষ্ঠপোষক জামায়াত-বিএনপিকে রাজনীতির মাঠ থেকে চিরতরে বিদায় করতে হবে। এদের প্রতি ন্যুনতম ছাড় ও নমনীয়তা হওয়ার কোন সুযোগ নেই। বিএনপি-জামায়াত সাম্প্রদায়িক-জঙ্গীবাদ-মৌলবাদ উৎপাদন পুনরুৎপাদনের কারখানা। অশান্তি উৎপাদন-পুনরুৎপাদনের কারখানা চিরদিনের জন্য বদ্ধ করে দিতে হবে। সারাদেশে ওয়াজের নামে রাজনৈতিক মোল্লারা যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডিত কারাবন্দী দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মুক্তি দাবী করছে। তিনি নারীবিদ্বেষী ওয়াজ মাহফিল বন্ধ করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি দাবী জানান।
প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতি অত্যন্ত মজবুত ও শক্তিশালী। বিশ্বের বড় বড় দেশগুলোও বাংলাদেশের বিস্ময়কর উন্নয়নে দেখে প্রশংসায় পঞ্চমুখ, উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবেও স্বীকৃতি দিয়েছে। সারাবিশ্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নে আইনক। তিনি বলেন, মুজিবর্ষে এক কোটি সুবিধা বঞ্চিত নারীকে পুনর্বাসিত করা হবে। বিএনপি জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে না, বিদেশীদের ওপর ভর করে নির্বাচনে জয় পেতে চায়। দলটির দুই প্রধান বিচারিক আদালতে দন্ডিত। ঘুম-খুন-দুর্নীতির কারণে বিএনপি এখন অভিশপ্ত দলে পরিণত করেছে।
জনপ্রিয় নাট্যাভিনেত্রী ও সরকারি দলের সংসদ সদস্য সুবর্ণা মোস্তফা বলেন, মুজিববর্ষে সংসদে বসে যারা বঙ্গবন্ধুকে খাটো করার দুঃসাহস দেখায়, তাদের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সরকার নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেও দেশে অনেক নারী এখনও নিরাপদ নয়। নারী ধর্ষনকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। মুজিবর্ষ হোক আমাদের সকল গ্লানি মুছে ফেলার বছর।