নিজস্ব সংবাদদাতা, টঙ্গী ॥ টঙ্গীতে আগামী শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া তাবলীগ জামাতের বিশ্ব এজতেমা মাঠের ব্যাপক প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে। ইতিমধ্যে মাঠের ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ৩ দিনের মধ্যে বাকী কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে এজতেমা আয়োজক কমিটি জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন। প্রথম পর্বের ৩ দিনের এজতেমা হবে ১০ জানুয়ারী থেকে ১২ জানুয়ারী। আর দ্বিতীয় পর্বের এজতেমা হবে ৪ দিন বিরতি দিয়ে ১৭ জানুয়ারী থেকে ১৯ জানুয়ারী পর্যন্ত। দু'ভাগেই থাকছে আলাদা আলাদা আখেরী মোনাজাতের ব্যবস্হা। টঙ্গীতে তাবলীগ জামাতের এ বিশাল এজতেমা আয়োজনে প্রতি বছরের মতো এবারও রাজধানী ঢাকা থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে টঙ্গী তুরাগ নদীর তীরে চলছে এ বিশ্ব এজতেমার ব্যাপক আয়োজন। সোমবার বিকালে সরেজমিনে এজতেমা ময়দান ঘুরে দেখা গেছে, শেষ মূহুর্তের বাকি কাজ গুলো সেরে নিতে।
এজতেমা ময়দানে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে আসা মুসল্লীদের কেউ কেউ প্রায় ১ বর্গ কিলোমিটার ব্যাপী বাঁশের খুঁটির উপর টানানো চটের ছাউনির উপরে ছাতা মাইক স্হাপন করছেন, বিদ্যুতের লাইন টেনে বাল্ব লাগাচ্ছেন, টয়লেট পরিস্কার করছেন, এবড়োখেবড়ো রাস্তাঘাট ঠিক করছেন, নামাজের জন্য কাতারের লাইন কোদাল দিয়ে সোজা করে কেটে দিচ্ছেন, পানির লাইনের কলগুলে স্হাপন করে দিচ্ছেন, আবার কেউ কেউ বিদেশী মেহমানদের জন্য বিদেশী কামরাগুলোতে থাকা খাওয়ার উন্নত ব্যবস্হার আয়োজন করছেন। সব মিলিয়ে টঙ্গীতে দেশ বিদেশ থেকে আসা তাবলীগ অনুসারী মুসল্লীদের খেদমতে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। এদিকে গাজীপুর সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম সোমবার জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবারের মধ্যে টঙ্গীর বিশ্ব এজতেমা মাঠের পুরো আয়েজন সম্পন্ন করা হবে। তিনি আরো জানান, মুসল্লীদের আসা এবং ময়দানে অবস্হানকালীন সময়ে কষ্ট লাগবে অন্যান্য বছরের চাইতে এবার আরও উন্নত ব্যবস্হা নেয়া হয়েছে। মশক নিধনেও থাকবে বিশেষ ব্যবস্হা। এসব প্রস্তুতির দেখভাল'র জন্য মেয়র জাহাঙ্গীর আলম প্রায় প্রতিদিনই এজতেমা ময়দানে ছুটে আসছেন।
ঘোষণা রয়েছে তাবলীগ জামাতের দুই অনুসারীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ৩ দিন করে এজতেমা করবেন কিন্ত দুই পক্ষই এখন দাবী করছেন নিজেদেরটাই আসল এজতেমা। অন্যদেরটা নকল এজতেমা। এদিকে আসল আর নকল এজতেমা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে পড়েছেন সাধারণ মুসল্লীররা। বুঝে না বুঝে সাধারণ মুসল্লীরাও দুই দলের অনুসারী হয়ে এজতেমার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশ্ব এজতেমা দুই পর্বে ৩ দিন করে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা থাকলেও এজতেমা আয়োজকদের আলেমী অনুসারী সদস্যরা শনিবার একটি হোটেলে সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, দ্বিতীয় পর্বে ৩ দিন ব্যাপী যা হবে তা ফেৎনা-ফেসাদে ভরা মাওলানা সাদের অনুসারীদের ব্যক্তি কেন্দ্রিক এজতেমা। কোরান হাদিসের অপব্যাখা দিয়ে সাধারণ মুসল্লীদের বিপথগামী করছে সাদের অনুসারীরা। মাওলানা সাদের অনুসারী সদস্য ওয়াসেকুল ইসলাম ও শাহাবুদ্দিন নাসিমরা এর নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।
তাদের এজতেমায় লাখ লাখ লোক উপস্থিত হয় না। তাঁরা নারীদেরও এজতেমায় উপস্থিত ঘটায়। অপর দিকে দ্বিতীয় পর্বের আয়োজক ওয়াসেকুল ইসলাম ও শাহাবুদ্দিন নাসিমদের বক্তব্য হচ্ছে, তাবলীগ জামাতের আমির হজরতজী হুজুর মাওলানা এনামুল হাসানের মৃত্যুর পর তাঁর অনুসারী মাওলানা সাদই হচ্ছেন বর্তমান তাবলীগ জামাতের আমির। তাকে ছাড়া এজতেমাকে বিশ্ব এজতেমা বলা যায় না। অপরদিকে যোবায়ের অনুসারী আলেমী সদস্যদের বক্তব্য হচ্ছে, দেশের ৬৪ জেলার মুসল্লীদের নিয়েই প্রথম ৩ দিনের এজতেমার আয়োজন। আয়োজনে দ্বিতীয় পর্ব - প্রথম পর্ব বা ওমুক গ্রুপের এজতেমা বলতে কোন কথা নেই।