স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত রাজাকারের তালিকা নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। বিশেষ করে বরিশালে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের নাম প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় দেখতে পেয়ে বেশ অবাক হয়েছেন তাদের স্বজনসহ অনেকেই। এরইমধ্যে রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম আসায় বরিশালে বিক্ষোভ কর্মসূচি ও প্রকাশিত তালিকায় অগ্নিসংযোগ করেছে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)।
এরইমধ্যে সময় যতো যাচ্ছে তালিকা থেকে ততো নতুন নতুন তথ্য বের হতে শুরু করেছে। যা নিয়ে বরিশালবাসীর মধ্যে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। বরিশালের সাধারণ মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি, প্রকৃত রাজাকারদের উত্তরসূরীরা নিজেদের পূর্ব পুরুষদের কুকর্ম আড়াল করতেই বির্তকিত তালিকা গঠণ করে সরকারকে বির্তকিত করেছে। তাই অনতিবিলম্বে এর সুষ্ঠ তদন্ত করে তালিকা প্রস্তুতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত।
আজ বুধবার সকালে প্রকাশিত তালিকায় স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বেয়াই মরহুম আব্দুল হাই সেরনিয়াবাতের নাম দেখে অবাক হয়েছেন তার উত্তরসূরিরা। সদ্যপ্রকাশিত রাজাকারের তালিকার বরিশাল বিভাগের অংশে ২০ নম্বর পৃষ্ঠার ৫৮ নম্বর সিরিয়ালে নাম রয়েছে আব্দুল হাই সেরনিয়াবাতের। এনিয়ে বুধবার দিনভর তোলপাড় শুরু হয়েছে গোটা বরিশালে। আব্দুল হাই সেরনিয়াবাত বঙ্গবন্ধুর বোন আমিনা বেগমের স্বামী সাবেক কৃষিমন্ত্রী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ভাই।
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও আগৈলঝাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত জনকণ্ঠকে বলেন, ১৯৭১ সালে আগৈলঝাড়া উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন আব্দুল হাই সেরনিয়াবাত। সেসময় তার বয়স ৬০ এর ওপরে থাকলেও তিনি প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখতেন স্বাধীন বাংলাদেশের। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার বন্দুকটি মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়েছিলেন।
আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত আরও বলেন, আব্দুল হাই সেরনিয়াবাতের চার সন্তানই মুক্তিযোদ্ধা। তার (আব্দুল হাই) নাম প্রকাশিত তালিকায় দেখে পরিবারের সদস্যদের সাথে মুক্তিযোদ্ধারা শুধু অবাকই নন, মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। সরকারকে বিব্রত করতে কিংবা তালিকাটি প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এমনটা করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি করেছেন।
আব্দুল হাই সেরনিয়াবাতের পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা সামসুল ইসলাম (আমান সেরনিয়াবাত) বলেন, আমাদের সেরনিয়াবাত পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। কিন্তু কীভাবে আমার বাবার নাম এই তালিকায় এসেছে! তা কল্পনাও করতে পারছি না! এ ঘটনায় নিন্দা জানানোর ভাষাও আমরা হারিয়ে ফেলেছি।
যুদ্ধাহত জাতীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বুলেট ছিন্টু জনকণ্ঠকে বলেন, এতদাঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সংগঠক ছিলেন বঙ্গবন্ধুর বোনজামাতা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত। তারই জেষ্ঠ পুত্র আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের মুজিব বাহিনীর আঞ্চলিক কমান্ডার। এছাড়াও সেরনিয়াবাত পরিবারের অধিকাংশরাই মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন। আব্দুল হাই সেরনিয়াবাতও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোকছিলেন। তার পরেও তার নাম মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তালিকায় আসা মানে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমানিত করা।