স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোর সেনানিবাসে অবস্থিত সিগন্যাল ট্রেনিং সেন্টার এন্ড স্কুলে সিগন্যাল কোরের ষষ্ঠ কোর পুনর্মিলনী কুচকাওয়াজ ২০১৯ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে প্যারেডে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অভিবাদন গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পুর্নমিলনী প্যারেডে প্রধান অতিথি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, সিগন্যাল কোর সেনাবাহিনীর গৌরবময় ঐতিহ্যের অংশীদার। স্বাধীনতার পর দেশ গঠন এবং দেশ মাতৃকার সেবায় এই কোরের সদস্যরা নিষ্ঠার সাথের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে যে কোন দুর্যোগময় মুহুর্তে সাধারণ মানুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে। সেনাবাহিনীর তত্ত্ববধানে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সেবামূলক কর্মকান্ডে সেনাবাহিনীর অংশ হিসেবে সিগন্যাল কোরের সদস্যদের অবদান প্রশংসনীয়। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে এবং কুয়েত পুনর্বাসন মিশনে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে সিগন্যাল কোর আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও প্রশংসা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। দেশ ও জাতির প্রয়োজনে ভবিষতেও একইভাবে জনকল্যাণমূলক কাজে সশস্ত্রবাহিনীকে অবদান রাখতে হবে।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বক্তব্যের শুরুতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল শহীদদের পাশাপাশি সিগন্যাল কোরের সদস্যদের আত্মত্যাগের ইতিহাস স্মরণ করেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বলেন, যুদ্ধের ময়দানে যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য অংশ হিসেবে কোর অব সিগন্যালস এই গুরুদায়িত্ব পালন করে আসছে। আধুনিক যুদ্ধে রণকৌশলগত বিষয়ে উপযুক্ত সিগন্যাল যোগাযোগ ও কম্পিউটার প্রযুক্তির প্রয়োগ যুদ্ধক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। এই পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত যোগাযোগ সরঞ্জামাদির সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে নিরাপদ এবং নিরবিচ্ছন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সরকার প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ খাতকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ অভিজাত স্যাটেলাইট ক্লাবের সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। বিদেশী স্যাটেলাইট নির্ভরতা পরিহার করে ইতোমধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে অত্যন্ত কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যার সুফল দেশবাসী উপভোগ করছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে সাটেলাইট হাব স্টেশন স্থাপন করে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নে কাজ করছে, এটি পুরোপুরি বাস্তবায়িথ হলে সেনাবাহিনীর সামগ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে একটি অনন্য মাত্রা যোগ হবে।
সেনাবাহিনীর সার্বিক ধারাবাহিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, সম্প্রতি সারাদেশের দুটি সিগন্যাল ব্যাটালিয়ন, বরিশাল, ষিসলেট ও রামুতে তিনটি স্ট্যাটিক সিগন্যাল কোম্পানি ও চারটি ব্রিগেট সিগন্যাল কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিকায়নের লক্ষ্যে ফোর্সেস গোল-২০৩০ এর আওতায় সেনাবাহিনীতে সাইবার ওয়ারফেয়ার গ্রুপ, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার ইউনিট, স্যাকটম ইউনিট ও স্ট্রাটেজিক ট্রান্সমিশন ইউনিট ইত্যাদি অন্তর্ভুক্তির পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। যা সামগ্রিকভাবে সেনাবাহিনীর সমরশক্তি ও যোগাযোগ সমক্ষমতা আরও সুসংহত করবে। সেনাবাহিনীর অপারেশনাল যোগাযোগ ব্যবস্থার এই সামগ্রিক উন্নয়নকে আপনারা যথাযথ ব্যবহার করে রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করতে সচেষ্ট হবেন বলে আশাবাদী।
জনগণের সুখ দুঃখে সেনাবাহিনীকে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় জনগণই সকল ক্ষমতার মালিক। রাষ্ট্র ও সরকারের সকল কর্মকান্ড পরিচালিত হয় জনগণের কল্যাণে। তাই আপনাদের দায়িত্ব পালনকালে জনস্বার্থ ও জনকল্যাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। মনে রাখতে হবে জনগণের কষ্টার্জিত টাকায়ই দেশের উন্নয়ন এবং রাষ্ট্রের যাবতীয় ব্যয় মেটানো হয়। তাই জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি জনগণের সুখ, দুঃখে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমি আশা করি দায়িত্ব পালনকালে আপনারা শুদ্ধাচার কৌশল যথাযথভাবে প্রতিপালন করবেন। নিজের দায়িত্ব সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে পালন করবেন।
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, জাতির পিতা সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার সত্ত্বেও একটি শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। তিনিউ কুমিল্লা সেনানিবাসে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি স্থাপন করেন এবং প্রথম ব্যাচের ক্যাডেটদের সমাপনী কুচকাওয়াজের অভিবাদন গ্রহণ করেন। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন ‘‘আমি তোমাদের জাতির পিতা হিসেবে আদেশ দিচ্ছি, তোমরা সৎ পথে থেক, মাতৃভূমিকে ভালো বাইসো। ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াবা, গুরুজনকে মেন, সৎ পথে থেক, শৃংখলা রেখ, তাহলে জীবনে মানুষ হতে পারবা’’। এই বাণী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য আলোকবর্তিকা। আমরা যেন জাতির পিতার সেই নির্দেশনা মেনে চলি। তাহলে আমাদের অগ্রযাত্রা কেউ প্রতিহত করতে পারবে না।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আরও বলেন, সেনা সদস্যরা বিশেষত সিগন্যাল কোরের সদস্যগণ পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার উন্নয়ন ঘটিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সফলতার সাথে পালনে সক্ষম হবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আশা করি সিগন্যাল কোরের ষষ্ঠ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান অবসরপ্রাপ্ত ও চাকরিরত সর্বস্তরের সদস্যদের মাঝে সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্ববোধকে আরও দৃঢ় করবে। অর্পিত দায়িত্ব পালনে সবাইকে উৎসাহিত করবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ ‘অমর প্রাণ’ এ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া, যশোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন, যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) ডা. নাসির উদ্দিন। এছাড়াও উর্ধ্বতন সামরিক ও আধা সামরিক কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা ও সামরিক এটাশেগণ এবং সিগন্যাল কোরের বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত অফিসার, জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার ও অন্যান্য পদবীর সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।