ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করা মাদক বিক্রেতারা সক্রিয়

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ১৩ নভেম্বর ২০১৯

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করা মাদক বিক্রেতারা সক্রিয়

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ আড়াই বছর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন মাদক বিক্রেতা শিলি বেগম, শিউলি, আনু, ডালিমসহ অনেকেই। শপথ করেছিলেন, আর কখনও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত হবেন না। কিন্তু সেই শপথ রাখেননি তারা। ফের যুক্ত হয়েছেন মাদক ব্যবসায়। যশোরের ‘মাদকপল্লী খ্যাত’ রায়পাড়া এলাকায় ইয়াবা বাণিজ্যকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করছেন তারা। স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, রেলগেট, রায়পাড়া, তুলোতলা ও আশপাশের এলাকায় অর্ধশতাধিক মাদক বিক্রেতা ফের সক্রিয় হতে শুরু করেছে। যদিও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, মাদকের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নতুন করে মাদকের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার কোনো সুযোগ নেই। স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, ২০১৬ সালের শেষদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতায় রায়পাড়ায় মাদকের বেচাকেনা বেশ খানিকটা কমে যায়। ২০১৭ সালের শুরুতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় শান্তি-শৃঙ্খলা কমিটি এই এলাকার বেশ কয়েকজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর বাড়ি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। শীর্ষ মাদক বিক্রেতা বেবীর ৪টি বাড়ি, শিলি বেগমের একটি বাড়ি ভাঙ্গা পড়ে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান ও চাপের মুখে ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ যশোরের ৮৬৬ জন মাদক বিক্রেতা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে আত্মসমর্পণ করে মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেয়ার অঙ্গীকার করেন। এরপর থেকে এই এলাকায় মাদকের বেচাকেনা বেশ কমে যায়। কিন্তু বছর ঘুরতেই সেই অঙ্গীকার থেকে সরে আসেন মাদক বিক্রেতারা। শিলি বেগম, শিউলি, আনু, বেবী, ডালিমসহ অনেকেই ফের জড়িয়ে পড়েন মাদক ব্যবসায়। এখন এলাকায় তারা ইয়াবা বাণিজ্যকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করছেন। স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, যশোর শহরের রায়পাড়া, রেলগেট, তুলোতলা এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই মাদক ও চোরচালানের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত। নব্বইয়ের দশকে এই এলাকা পরিচিত ছিল চোরাইপথে আসা ভারতীয় শাড়ি, থ্রিপিস, চাদরসহ বিভিন্ন পণ্যের মার্কেট হিসেবে। পরবর্তীতে হেরোইন ও ফেনসিডিলের পরিচিতি লাভ করে রায়পাড়া। একপর্যায়ে মাদকপল্লী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে ওঠে এই এলাকাটি। স্থানীয় সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, রেলগেট, তুলোতলা, রায়পাড়া এলাকায় এখন অর্ধশতাধিক মাদক বিক্রেতা নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। এরা এখন ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রির তৎপরতা শুরু করেছে। এদের মধ্যে রয়েছে, রায়পাড়া কয়লাপট্টি এলাকার সোহেল মহুরির বাড়ির ভাড়াটিয়া আব্দুর রহিম ওরফে মুরগি রহিম, রহিমের বউ দুলারী, সোহরাব হোসেন ছোট’র স্ত্রী শিলি বেগম, মজিবরের স্ত্রী মোটা জহুরা ও তার ছেলে রানা, করিমের ছেলে সবুজ ও মিন্টু, মিন্টুর স্ত্রী সীমা, মাদ্রাসা রোড এলাকার আম বাবুর ছেলে আব্দুর রশিদ, ইসরাফিলের ছেলে সন্ত্রাসী সজল, লিয়াকতের ছেলে রহমান ও পাখি, টাক জালালের ছেলে লাডল, বাদশার স্ত্রী রাণী, চাঁন গাজীর স্ত্রী বেবী খাতুন, মৃদুল, ডালিম, আসমা, মড়া, নাহার, রেলগেট পশ্চিম পাড়ার ঢাকাইয়া লিয়াকতের ছেলে সানু, আনু ও আনুর মেয়ে শিউলি, রেলগেট রেল লাইনের পাশের বাসিন্দা নাজু, তুলোতলা এলাকার আরিফের ছেলে রমজান। সূত্র মতে, মাদক বিক্রেতা রহিম পুলিশের সোর্স পরিচয়ে নকল ইয়াবা তৈরি করে বিক্রি করছে। শিলি বেগম, বেবি, আনু, শিউলি ইয়াবার বড় বড় চালান নিয়ন্ত্রণ করে। আর জোহুরা, রানা, আসমা, মড়া, নাহার ইয়াবার পাইকারি বিক্রেতা। এদের মাধ্যমেই খুচরা বিক্রেতার ইয়াবাসেবীদের কাছে মাদক পৌঁছে দিচ্ছে। তবে মাদক ব্যবসায়ীরা মাথাচাড়া দেয়ার চেষ্টা করলেও বসে নেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর শীর্ষ মাদক বিক্রেতা বেবী খাতুন এলাকায় ফিরে ব্যবসা শুরু করায় আবারও আটক হয়েছে। গত ৫ অক্টোবর পুলিশের অভিযানে আরও ৪ মাদক বিক্রেতার সাথে বেবী আটক হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ১০৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট। ১৪ অক্টোবর ধরা পড়ে ইয়াবা বিক্রেতা রশিদ। যদিও কিছুদিন পরই আবার সে জামিনে মুক্তি পেয়ে ব্যবসা শুরু করেছে। এছাড়াও আটক হয়ে কারাগারে রয়েছে মিন্টু ও শিউলি। এ প্রসঙ্গে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) গোলাম রব্বানী শেখ বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই মাদক উদ্ধার, বিক্রেতা আটক এবং মাদক আইনে মামলা হচ্ছে। মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। ফলে যেই মাদক ব্যবসায় জড়িত হোক না কেন, পার পাবে না বলেও হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
×