ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করার তাগিদ

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ৩ নভেম্বর ২০১৯

 ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করার তাগিদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় বাস্তুচ্যুত লোকদের স্থানান্তরের ক্ষেত্রে প্রণীত খড়সা নীতিমালায় ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের অভাব রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই বাস্তুচ্যুত হয়ে অন্যত্র স্থানান্তরিত হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বাস্তুচ্যুতি সরকার জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই প্রেক্ষাপটে সরকার জাতীয় উন্নয়ন কর্মকৌশলের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে একটি নীতিমালা প্রস্তুতের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এই নীতিমালায় ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা না গেলে তা সফলতা পাবে না। শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। দুর্যোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বাস্তুচ্যুতি বিষয়ক খসড়া জাতীয় নীতিমালা ও নাগরিক সমাজের অভিমত শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে কোস্ট ট্রাস্ট এবং ক্যাম্পেন ফর সাসটেইনেবল রুরাল লাইভলিহুড (সিএসআরএল)। অনুষ্ঠানে বক্তরা বলেন, সরকার প্রণীত এই নীতিমালা চূড়ান্ত করার আগে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। খসড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং জলবায়ু অভিযোজনে বিদ্যমান অভিজ্ঞতার আলোকে চূড়ান্ত করতে হবে। এর বাস্তবায়ন কৌশল হতে হবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশেষ বিপদাপন্ন অঞ্চলভিত্তিক। আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. মোঃ এনামুর রহমান বলেন, এ সংক্রান্ত খসড়া চূড়ান্ত করার আগে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংশ্লিষ্টদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। এটি দ্রুত বাস্তবায়নেও তার প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করেন। আলোচনা সভার মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের ঝুঁকি মোকাবেলায় যে খসড়া কৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে এতে অধিকার ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি অগ্রাধিকার পেয়েছে। জাতীয় এই কৌশলটি প্রণয়নের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর পর্যাপ্ত অংশগ্রহণের অভাব রয়েছে। এ কারণেই এতে অধিকতর জনঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করা না গেলে অন্যান্য নীতিমালার মতোই আলোর মুখ দেখবে না। তিনি এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তুলে ধরে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা এবং দুর্যোগে বিপন্ন জনগোষ্ঠী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এই কৌশলটি নিয়ে মতবিনিময়-আলোচনা করতে হবে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে এটি চূড়ান্ত করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিপন্ন ছয়টি এলাকায় বাস্তুচ্যুতির প্রবণতা এবং ঝুঁকি নিয়ে গবেষণা করতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিপন্ন অঞ্চলভিত্তিক ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রণয়ন করতে হবে। এই পরিকল্পনাকে জাতীয় পরিকল্পনার সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। আলোচনায় অংশ নিয়ে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, জাতীয় কৌশল তৈরিতে অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা প্রয়োজন। বাস্তুচ্যুতির বিষয়ে প্রণীত এই কৌশলটি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে আন্তর্জাতিক আলোচনার ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান বা কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ শহিদুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী সবসময় জলবায়ু ন্যায়বিচারের বিষয়টি বৈশ্বিক বিভিন্ন ফোরামে জোরালোভাবে তুলে ধরছেন। সবসময় জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী ধনী ও ক্ষমতাশালী দেশগুলোকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আসছেন। তার এই অবস্থান ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে বাংলাদেশের সরকার এবং সুশীল সমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে, আর এর ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের দাবিগুলো জোরালোভাবে তুলে ধরা সম্ভব হচ্ছে। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ মহসিন বলেন, একটি সরকারী দলিল চূড়ান্ত করতে অনেক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ নিতে হয়। এই কৌশলটি চূড়ান্ত করতে গিয়ে বিদ্যমান বিভিন্ন নীতি-আইনের সঙ্গেও সামঞ্জস্য বিধান করতে হবে। আর তাই এটি চূড়ান্ত করতে কিছুটা সময় লাগছে। কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, কৌশলটি অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে, এটি হবে ফলাফল ভিত্তিক এবং এর বাস্তবায়ন কৌশল বিভিন্ন এলাকাকে বিবেচনা করে চূড়ান্ত করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
×