নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া ॥ ঝড়-জলোচ্ছ্বাসকালীন প্রাথমিক রক্ষা কবচ সবুজ দেয়াল ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল এখন হুমকির কবলে পড়েছে। প্রতিনিয়ত এ বনাঞ্চল উজাড় করা হচ্ছে। ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বনাঞ্চল দখল করে ঘরবাড়ি, মাছের ঘের করা হচ্ছে। আর এ বনাঞ্চল উজাড়ের কারণে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসকালীন ঝাপটা বাধাগ্রস্তের অবলম্বন হারিয়ে ফেলছে মানুষ। এ অঞ্চলের মানুষ ও তাঁদের সম্পদ চরম ঝুঁকির কবলে পতিত হচ্ছে। পরিধি কমছে সবুজ দেয়ালখ্যাত ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বনাঞ্চল। নদী-সাগর বেষ্টিত উপজেলা কলাপাড়ায় ১০টি পোল্ডারের ৩৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের বাইরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহণকৃত এলাকা ৫০ এর দশকের পরে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বনাঞ্চল সৃজন করা হয়। এছাড়া বনবিভাগ সংরক্ষিত বনাঞ্চলেও ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বনায়ন করে। প্রলয়ংকারী ঝড়ের সময় জলোচ্ছ্বাসের ঝাপটা এ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল বুকের মতো বাধাগ্রস্ত করে আগলে রেখেছে মানুষ ও তাঁদের সম্পদকে। সবশেষ প্রলয়ঙ্কারী প্রকৃতির বুলডোজারখ্যাত ঘুর্ণিঝড় সিডরের সময় এ সবুজ দেয়াল মানুষকে প্রাণে রক্ষা করেছে। যেসব বেড়িবাঁধের বাইরে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বনাঞ্চল ছইলা, কেওড়া, গেওয়া, বাইনসহ গুল্ম জাতীয় গাছপালা ছিল সেখানে জলোচ্ছ্বাসের ঝাপটা ঠেকিয়ে দিয়েছে। কিন্তু গত টানা ২০টি বছর প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো এবং সৃজিত ম্যানগ্রোভ প্রজাতির এসব বনাঞ্চল উজাড়ে হামলে পড়ে মানুষ। একের পর এক গাছ কেটে উজাড় করায় বিরাণভূমিতে পরিণত হয় মাইলের পর মাইল সবুজ দেয়ালখ্যাত ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বনাঞ্চল। বেড়িবাঁধের বাইরের অন্তত দেড় শ’ কিলোমিটার এলাকার ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বনাঞ্চল গত ২০ বছরে উজাড় হয়েছে। এক শ্রেণির পেশাদার বনদস্যুর পাশাপাশি স্থানীয়রা গাছগুলো কেটে বাড়িঘর, মাছের ঘের কিংবা ফসলি জমিতে পরিণত করে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বনাঞ্চল।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের বেহাল দশা। ভূমি দস্যুদের বেপরোয়া দখল তান্ডবে এ জনপদে আগামি কয়েক বছরে দূর্যোগকালীন এ রক্ষাকবচ সবুজ দেয়ালখ্যাত ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বনাঞ্চল আদৌ থাকবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এলাকার দীর্ঘ এলাকা প্রায় ২০কিলোমিটার এলাকায় খাজুরা, লেম্বুরচর, কুয়াকাটা, গঙ্গামতি ও কাউয়ারচর এলাকা ছিল ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গহীন বনাঞ্চলে ঘেরা। গা ছম ছম করত এসব বনে প্রবেশ করতে। বেড়িবাঁধের বাইরের এলাকাসহ বাঁধের রিভার সাইটের স্লোপে ছিল বনাঞ্চলে ঘেরা। এখন এ ৩৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অর্ধেকটা উজাড় হয়ে গেছে। বেড়িবাঁধের বাইরের ম্যানগ্রোভ ছাড়াও সব ধরনের বনাঞ্চল কেটে সাফ করা হয়েছে। সেখানে এখন বিরানভূমি হয়ে আছে। এভাবে সব ক’টি বাঁধের রিভার সাইটের একই অবস্থা হয়েছে। এসব ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল এলাকাকে আবার স্থানীয় ভূমি অফিস চাষযোগ্য কৃষি জমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত দেয়ায় আরেক দফা বনাঞ্চল কাটার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছ্। বন্দোবস্ত গ্রহীতা ব্যক্তি গাছ কেটে বাড়িঘর, মাছের ঘের করছে। মধুখালী এলাকায় এ দৃশ্য বিরাজমান রয়েছে। মোট কথা এমন কোন ইউনিয়ন নেই যেখানের বনাঞ্চল কমছে না। যদিও সামাজিক বনায়নের কাজ আগের চেয়ে বেড়েছে। বেড়েছে সামাজিক বনায়নের পরিধি। কিন্তু ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বনাঞ্চলে মানুষকে দূর্যোগকালীন যে নিরাপত্তা দেয় তা সামাজিক বনায়ন থেকে পায় না। ফলে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের গুরুত্ব অনেক বেশি। যা হারিয়ে গেলে ছোট ধরনের জলোচ্ছ্বাসের ঝাপটায় ব্যাপক ক্ষতির কবলে পড়বে উপকূলের মানুষ ও তাদের সম্পদ। উপজেলা বন ও পরিবেশ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান জানান, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।