অনলাইন ডেস্ক ॥ তুরস্কের বিরুদ্ধে সিরিয়ায় বিশৃঙ্খলা তৈরির অভিযোগ এনেছে সৌদি আরব। যুক্তরাজ্যে সৌদি আরবের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালিদ বিন বন্দর বিন সুলতান আল সৌদ এমন অভিযোগ অভিযোগ করেছেন। ১৫ অক্টোবর মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়েল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট-এ দেওয়া বক্তব্যে সিরিয়ায় তুর্কি অভিযান নিয়ে নিজ দেশের অবস্থান তুলে ধরেন এই কূটনীতিক। যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূতরা সচরাচর এসব বিষয়ে মন্তব্য করেন না। তবে নীরবতার রীতি ভেঙ্গে এদিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক, সৌদি-ইরান বিবাদসহ সমসাময়িক অন্যান্য বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালিদ।
সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় তুর্কি হামলা এ অঞ্চলের জন্য একটি বিপর্যয়। এটি বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে।
সিরিয়ায় তুরস্কের সামরিক অভিযানের জেরে ইতোমধ্যেই দেশটির দুইজন মন্ত্রী এবং তিনজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া অঞ্চলটিতে দ্রুত একটি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানকে ফোন করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেই সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞায় ট্রাম্পের আপাত অনুমোদনের বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, কোনও প্রশ্ন নয়। আমরা উদ্বিগ্ন। সিরিয়ায় তুরস্কের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যা ঘটছে এবং যেভাবে দেশটি থেকে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি প্রত্যাহার করা হয়েছে তাতে ওয়াশিংটনের আমাদের চরম আত্মবিশ্বাসী হওয়ার সুযোগ নেই।
রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালিদ বলেন, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্যে তিনি বিরক্ত। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে একজন ‘টুইট দানব’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেন এ সৌদি কূটনীতিক। তবে তিনি স্বীকার করেন, কখনও কখনও এই টুইটগুলো শুধু ট্রাম্পের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল।
তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতির নিদর্শন হিসেবেই সৌদিতে সেনা ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াশিংটন। তবে গত ১০ বছরে এ অঞ্চলের প্রতিটি দুর্যোগে কে লাভবান হয়েছে? প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এখানে নিশ্চিতভাবেই সৌদি আরব লাভবান হয়নি।
সৌদি আরব শুধু নিজের স্বার্থের ব্যাপারেই তৎপর। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া দেশটি টিকতে পারবে না। ট্রাম্পের এমন মন্তব্যেরও সমালোচনা করেন প্রিন্স খালিদ। তিনি বলেন, রিয়াদ বৈশ্বিক স্বার্থে ভূমিকা রেখেছে। সৌদি চাইলেই তেলের দাম আকাশছোঁয়া করে দিতে পারে। এ থেকে আরও লাখ লাখ ডলার উপার্জন করতে পারে। আমরা এটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি। কারণ এটি বিশ্বের জন্য ভালো হতো না। পুরো দুনিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লে সৌদি আরবও এর বাইরে থাকতে পারবে না।
ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসনে ‘বহু ভুলভ্রান্তি হয়েছে’ বলে স্বীকার করলেও দেশটিতে রিয়াদের হস্তক্ষেপকে সমর্থন করেন প্রিন্স খালিদ। তবে দেশটিতে শান্তি স্থাপনের কোনও পরিকল্পনা তিনি হাজির করেননি। ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগি-র নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সৌদি আরব উন্মত্ত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বলেও স্বীকার করেন তিনি। প্রিন্স খালিদ বলেন, একবার সত্য প্রকাশ হতে শুরু করলে এটি পুরো সিস্টেমকেই ঝাঁকুনি দেয়। ওই সময়ে রিয়াদের প্রতিক্রিয়ার একটি অংশ উন্মত্ততায় ভরা।