বুধবার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর বাণিজ্যিক সম্প্রচার কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণমাধ্যমের ভূমিকা বিষয়ে কিছু তাৎপর্যপূর্ণ অভিমত প্রকাশ করেছেন। তিনি যথার্থই বলেছেন, সরকার বিরোধিতার নামে অপপ্রচারগুলো মানুষের মধ্যে অনাস্থা সৃষ্টির পাশাপাশি দেশে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনই প্রত্যাশিত। অপপ্রচার শুভ উদ্যোগ ও তৎপরতার বিপরীতে ক্ষতিকর অপপ্রয়াস- এতে কোন সংশয় নেই। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড তুলে ধরার কথাটিও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। বলাবাহুল্য, নিজের দেশের উন্নয়নের সঠিক চিত্র পেলে দেশবাসীর মনে আত্মবিশ্বাাস বাড়বে এবং উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখা সম্ভব হবে। টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ সরকারপ্রধানের আহ্বানের তাৎপর্য অনুধাবন করে সম্প্রচারে তার প্রতিফলন ঘটাবে, এমনটি আশা করা যায়।
দেশের সব টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার শুরু করা গেছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে- এই সুসংবাদ স্বস্তিকর। এতকাল সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে আমাদেরকে অন্য দেশের কৃত্রিম উপগ্রহ ব্যবহারের সুবিধা কিনতে হতো বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে। উল্লেখ্য, গত বছরের ১২ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ।
স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে বাংলাদেশ নানাভাবে উপকৃত হবে। স্যাটেলাইটের সক্ষমতা বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও সাশ্রয় সম্ভব। এছাড়া স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবার সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে। এ ধরনের স্যাটেলাইটের আরেকটি সুবিধা হলো দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলা ও ব্যবস্থাপনায় কার্যকর ভূমিকা রাখা। দুর্যোগের আগাম সঙ্কেত নৌচলাচলের ক্ষেত্রে সতর্কতা বাড়ায়। জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজেও এ স্যাটেলাইটকে কাজে লাগানো যাবে। ঝড় বা বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকার অধিবাসী। এমন পরিস্থিতিতে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখা সম্ভব হয়ে থাকে। আগামীতে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট থেকে এ ধরনের উপকার মিলবে বলে আশা করা যায়। এছাড়া অদূর ভবিষ্যতে সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলের মানুষের ইন্টারনেট ও ব্যাংকিং সেবা, টেলিমেডিসিন ও দূরনিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রসারেও ব্যবহার করা হবে এ স্যাটেলাইটÑ এমনটিই প্রত্যাশা। অর্থাৎ এই স্যাটেলাইট দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক সহায়ক ভূমিকা রাখবে, এটি সুনিশ্চিত।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট কেবল যে বাংলাদেশের মাথা বিশ্বসভায় উঁচু করে দিয়েছে, কিংবা এটি থেকে অনেক অতীব প্রয়োজনীয় সুবিধা প্রাপ্তি নিশ্চিত হবেÑ এমনটি নয়। একইসঙ্গে এই ঐতিহাসিক ঘটনা বিজ্ঞানচেতনায় পিছিয়ে থাকা একটি জাতিকে বিজ্ঞান শিক্ষার আবশ্যকতা বিষয়েও সচেতন করার পথ প্রসারিত করেছে। সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বাংলাদেশের সুনাম সীমানা অতিক্রম করেছে বহুকাল আগেই। আশা করা যায় আগামীতে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও কারিগরি চর্চায়ও দেশ যথেষ্ট উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে প্রশংসিত হবে।
স্মরণযোগ্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই বাংলাদেশকে আত্মমর্যাদাশীল, স্বনির্ভর দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালে বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট যোগাযোগের সূচনা হয়। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রক্রিয়ায় তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব আহমেদ জয়ের উদ্যোগে মহাশূন্যে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। জাতির প্রত্যাশা নিজ দেশের স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টিভি চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার শুরুর এই শুভক্ষণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজ নিজ টিভির অনুষ্ঠান ও সংবাদের মান উন্নয়নের বিষয়টি বিশেষ বিবেচনা করবেন।