অনলাইন রিপোর্টার ॥ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করতে পারলে এসব ক্ষেত্রে সব ধরণের দুর্নীতি ও অনিয়ম কমে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন।
বুধবার বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন পরিদর্শনকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। কমিশনের সচিবের পরিদর্শ উপলক্ষে ̈ “বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের কার্যক্রম অবহিতকরণ” শীর্ষক সভা সকাল ১১ টা হতে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত কমিশনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন। সভাপতিত্ব করেন প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপার্সন মোঃ আব্দুর রউফ। এতে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণসহ প্রতিযোগিতা কমিশনের সকল কর্মকর্তা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভা শুরুর আগে সচিব প্রতিযোগিতা কমিশন অফিস ঘুরে দেখেন এবং কমিশনের জন্য ভাড়াকৃত নতুন অফিস স্পেস উদ্বোধন করেন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সচিব বলেন, বাজারে ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা কমিশনের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেবা প্রদানকারী ও সেবা গ্রহণকারীর মধ্যে যাতে কোন গ্যাপ সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। প্রতিযোগিতা কমিশনের সাফল্য নির্ভর করবে মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন, ব্যবস্থাপনা ও প্রাসঙ্গিক বিষয়সমূহের সঠিক প্রয়োগের উপর। প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির সাথে সাথে দুর্নীতি ও অনিয়ম কমে যাবে।
তিনি কমিশনের কার্যক্রমের আওতা ও বাজেট সম্প্রসারণের উপর গুরুত্বারোপ করেন। এমটিবিএফ বাজেটের আওতায় আগামি ৩ বছরের বাজেটসহ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য তিনি নির্দেশনা দেন। কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে ভোক্তা সাধারণের প্রয়োজনের দিক বিবেচনায় নিয়ে অগ্রাধিকার খাত চিহ্নিত করণের আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, কমিশনের উন্নয়নে মন্ত্রণালয় সার্বিক সহায়তা দিবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা রাখার জন্য তিনি কমিশনের কর্মকর্তাদের প্রোএক্টিভ হিসেবে কাজ করার পরামর্শ দেন। ব্যবসায়ী ও ভোক্তাগণ যেন বুঝতে পারেন যে, কমিশন তাদের স্বার্থে কাজ করছে, সেরূপ কাজ করারও নির্দেশনা দেন।
সভায় প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপার্সন বলেন, বাজারে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে সরকার প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ প্রণয়ন করেছে। প্রতিযোগিতা আইন সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভোক্তা ও বিক্রেতা উভয়ে লাভবান হবে এবং দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ থেকে ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। যৌক্তিক মূল্যে পণ্য ও সেবা ক্রয়ের সুযোগ পাওয়ার ফলে দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভোক্তাদের প্রকৃত আয় ও ব্যয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে দারিদ্র্যতা বহুলাংশে হ্রাস পাবে।
বাজারে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পণ্য ও সেবার গুনগত মান বৃদ্ধি পাবে। বাজারে প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টির ফলে পণ্যে বৈচিত্র আসবে এবং নতুন উদ্যোক্তার বাজারে প্রবেশ সহজতর হবে। এছাড়া রূপকল্প ২০২১ এবং রূপকল্প ২০৪১ অর্জনে অধিক পরিমাণ বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। ২০২৪ সালে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পর বাংলাদেশ সম্পর্কে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ আরও বাড়বে।
এমন প্রেক্ষাপটে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে বাজারে প্রতিযোগিতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা কমিশনের ভূমিকা ও কৃতিত্ব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। নবীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিযোগিতা কমিশন শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে একটি
প্রকল্প প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় পরামর্শকগণ এখানে কাজ করে কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবেন। কমিশনে আইটি নির্ভর ডাটাবেজ গড়ে তোলা হবে।
কমিশনের পরিচালক মোঃ খালেদ আবু নাছের প্রতিযোগিতা কমিশনের কার্যক্রম অবহিতকরণ শীর্ষক একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন। উপস্থাপনায় প্রতিযোগিতা কমিশনের কার্যক্রম, বাজারে প্রতিযোগিতা নিশ্চিতকরণে কমিশনের ভূমিকা, মার্জার ও এ্যাকুইজিশন, বর্তমান ও আগামী দিনগুলিতে কমিশনের চ্যালেঞ্জসমূহ ও সেগুলি কাটিয়ে উঠার কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়।
প্রেজেন্টেশন শেষে প্রতিযোগিতা কমিশনের এডভোকেসি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নির্মিত দুটি টিভি কমার্শিয়াল (টিভিসি) দেখানো হয়।