স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ বৃষ্টি হলে জলাধারে পানি বাড়বে এমন আশায় দেরি করে পাট কেটেছেন যশোর অঞ্চলের অনেক চাষি। কিন্তু সেভাবে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় অল্প পানিতে পাট জাগ দিতে হয়েছে। ফলে ভালোমতন না পচায় পাটের আঁশের রং ভালো আসেনি। সোনালীর বদলে কালচে বর্ণ ধারণ করেছে। আর যেসব চাষিদের পাটের রং ভালো হয়নি তাদের ভালো বাজার দর মিলছে না। কম দামেই তাদেরকে পাট বিক্রি করতে হচ্ছে।
তবে পাটের আঁশ থেকে কৃষক তেমন লাভবান না হলেও পাটকাঠি বিক্রির অর্থ তাদের লোকসান গোনার থেকে রেহাই দিচ্ছে। ফলন ভালো হওয়ায় প্রচুর পাটকাঠি পেয়েছেন কৃষক। সেটি বিক্রি করে ভালো দাম পাচ্ছেন তারা। একশ আঁটি পাটকাঠি ২ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে।
জানা গেছে, সরকারিভাবে এবছর যশোরের বাজারে দেশি জাতের তোশা পাটের দাম মান ভেদে মণ প্রতি ১৪শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যেসব পাটের আশের রং ভালো হয়েছে সেগুলোর দাম ১৪শ’ ৫০ থেকে ১৫শ’ টাকা। আর যেসব পাটের রং কালচে বর্ণের হয়েছে সেসব পাটের বাজার দর ১৪শ’ ২৫ টাকা ধার্য করা হয়েছে। এদিকে পাট চাষিদের দাবি, বাজারে পাটের দাম ১২শ’ থেকে ১৩শ’ টাকার উপর উঠছে না। বিশেষ করে যাদের পাটের রং ভালো হয়নি তারা পাটের কাঙ্খিত দাম পাচ্ছেন না। তবে এবছর ভালো ফলন হওয়ায় পাটের আঁশ ছাড়ানোর পর পাটকাঠির পরিমাণ বেশি হয়েছে। যেটি বিক্রির অর্থ চাষিদের লোকসান বেশ খানিকটা পুষিয়ে দিচ্ছে।
যশোর সদরের দেয়াড়া ইউনিয়নের আলমনগর এলাকার কৃষক ফারুক হোসেন জানান, এবছর এক বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। পাট তোলার পর জাগ দিয়ে রোদে শুকানোর পর ১০ মন পাটের আঁশ পেয়েছেন। কিন্তু অল্প পানিতে জাগ দেওয়ার পর পাটের আঁশের রং কালো হয়ে গেছে। একারণে পাটের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছেন না। এবছর এমনিতেই পাটের বাজার দর ভালো না। মণ প্রতি ১৩শ’ টাকার উপরে দাম উঠছে না।
তিনি বলেন, এবার এক বিঘা জমিতে পাট চাষে দশ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কারণ জমি চাষ করা, সার ও নিড়ানির খরচের পাশাপাশি সেচ খরচটাও এবার বেশি হয়েছে। বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় জমিতে বার বার সেচ দিতে হয়েছে। তবে ফলন ভালো হলে পাটকাঠির পরিমাণটা বেশি হয়। যেকারণে পাটের বাজার দর কম হলেও পাটকাঠি বিক্রি করে পাট চাষের লোকসানটা পুষিয়ে নিতে পারব। দশ মণ পাটের আঁশ ছাড়ানোর পর প্রায় সাড়ে তিনশ আঁটি পাটকাঠি পেয়েছি। এসব পাটকাঠি পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হবে। বর্তমানে একশ আঁটি পাটকাঠি ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সিনিয়র কৃষি বিপণণ কর্মকর্তার যশোর কার্যালয়ের জেলা বাজার কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান জানান, বাজারে উজ্জল সোনালী বর্ণের তোশা পাটের দাম ১৪শ’ ৫০ থেকে ১৫শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর যেসব পাটের রং একটু কালচে বর্ণের হয়েছে সেগুলোর দাম ১৪শ’ থেকে ১৪শ’২৫ টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে যশোর অঞ্চলের ছয় জেলায় এক লাখ ৬১ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। চাষ হয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ১৮৬ হেক্টর জমিতে।