ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

রেললাইনের ক্ষতিপূরণ পাবার আশায় বরিশালে স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক

প্রকাশিত: ০২:৪৯, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

রেললাইনের ক্ষতিপূরণ পাবার আশায় বরিশালে স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ ধান-নদী-খালের বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চল এবার রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসছে। তাই দক্ষিণের জনপদের মানুষ এখন স্বপ্ন দেখছেন রেল সংযোগের। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে শুরু হয়ে বরিশালের ওপর দিয়ে রেল সংযোগ যাবে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার পায়রা সমুদ্র বন্দরে। সেখান থেকে সরাসরি রেললাইন যাবে পর্যটন কেন্দ্র সাগরকন্যা কুয়াকাটায়। সূত্রমতে, দক্ষিণাঞ্চলবাসীর প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় বরিশালের মানুষের স্বপ্নের রেলপথ যোগাযোগ স্থাপন প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। রেলপথ নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার আগে সম্ভাব্যতা যাচাইসহ প্রকল্প পরিকল্পনার আওতায় বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি ভূমি অধিগ্রহণে সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্তদর সাথে মতবিনিময়ও করছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলো। মাঠপর্যায়ে এ মতবিনিময় ও সম্ভাব্যতা যাচাই জরিপের পর ভূমি অধিগ্রহণে সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্তদের জায়গায় বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। তবে এ কাজ যে শুধু সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্তরা করছেন তা নয়। এক কথায় অর্থে বিত্তে স্বচ্ছল ও প্রভাবশালীরাই বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে অসচ্ছল ব্যক্তিদের জায়গায় চুক্তিতে স্বচ্ছল ব্যক্তিরা ঘর তুলে দিচ্ছেন। এমনকি সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) আওতায় জমি হলেও কোনো ধরনের প্লান পাস না করিয়েই স্থাপনা তৈরি করছেন অনেকে। এক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের নোটিশও দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের শেখেরহাট সংলগ্ন আলতাব হাওলাদারকে কোনো প্লান পাস না করিয়ে স্থাপনা নির্মাণের ঘটনায় নোটিশ দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। তবে ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় এক্ষেত্রে ওইভাবে কোনো বাধা নিষেধ নেই। যেমনটি ঘটছে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের ভরতকাঠি গ্রামে। ওই গ্রামেও রেল-লাইনের সম্ভাব্য জায়গা নির্ধারণ করে বিভিন্ন বাড়িতে একটি নম্বর লেখা হয়েছে লাল রং দিয়ে। আর সেই নির্ধারণের সূত্র ধরেই ওই গ্রামে শুরু হয়েছে নতুন স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক। যারা স্থাপনা নির্মাণ করছেন তাদের দাবি, রেললাইন প্রকল্প সস্প্রসারণ করলে এসব স্থাপনার জন্য বেশি টাকা বাগিয়ে নিতে পারবেন, সেজন্যই তারা এসব কাজ করছেন। সরেজমিনে নলছিটি উপজেলার ভরতকাঠি ও বরিশাল নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিপুর খানাবাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে জমি জরিপের অল্প কয়েকদিনের মধ্যে সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে পাকা স্থাপনা। এসব স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে বাদ যাচ্ছেনা চাষাবাদের জমিও। সূত্রমতে, ভাঙ্গা উপজেলা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত ২১১ দশমিক পাঁচ কিলোমিটার রেলপথের দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এ রেললাইনের প্রস্থে ১০০ মিটার জায়গা নির্ধারণ করা হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিডিসি) হয়ে ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেফ গার্ড কনসালট্যান্ট (ডিএসসি) মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের সার্ভে কার্যক্রম চালিয়েছে। এরমধ্যে বর্তমানে ভূমি অধিগ্রহণে সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্থদের সাথে মতবিনিময় করা হয়েছে। ওই সভার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের নানা সুবিধা-অসুবিধার কথা বলা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে চলমান সব সার্ভে যাচাই-বাছাই করে রেলপথের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। এরপরই শুরু হবে রেলপথ অবকাঠামো নির্মাণ কার্যক্রম। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডিএসসির সুপারভাইজার সরোয়ার জাহান পার্থ বলেন, মাঠপর্যায়ে ভূমি অধিগ্রহণে সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে মতবিনিময় করা হয়েছে। তাদের বিভিন্ন কথা শুনছি এবং ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টি সম্পর্কে সরকারের পদক্ষেপগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরার কাজ করছি। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেন, রেললাইনের জায়গা নির্ধারণ এখনই চূড়ান্ত করা হয়নি। তাই যারা খালি জমিতে স্থাপনা তৈরি বা পরিবর্তন করছেন তারা বেশি লাভের আশায় লোকসানের সম্মুখীন হতে পারেন। আবার পরামর্শক প্রতিষ্ঠানও তাদের জরিপের সময় স্থানের বিবরণ টুকে নিয়েছেন। ফলে স্থাপনা নির্মাণ বা পরিবর্তন করলে কতোটা লাভবান হওয়া যাবে তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, যারা অতিলোভে এখন স্থাপনা তৈরি করছেন, কিংবা এসব স্থাপনা তারা নিজেরা কখনও ব্যবহার করবেন না, তারা অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কারণ সব জায়গা কিন্তু অধিগ্রহণ হবে না এবং কোন জায়গাটি অধিগ্রহণ হবে তা এখনও সুনির্দিষ্টভাবে অনুমোদিত নয়। অর্থাৎ এখনও প্রশাসনিক অনুমোদন হয়নি।
×