অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে বঙ্গোপসাগরের মৎস্য সম্পদ এবং প্রাণ বৈচিত্র ধ্বংসকারী বৃহৎ দূষণকারীকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহবান জানিয়েছেন অধিকারভিত্তিক নাগরিক সমাজ। তারা দরিদ্র জেলেদেরকে ৬৫ দিনের জন্য আরোপিত মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে রাখারও সুপারিশ করেন।
কোস্ট ট্রাস্ট এবং বাংলাদেশ মৎস্য শ্রমিক জোট যৌথভাবে এই মানববন্ধন আয়োজন করে। কোস্ট ট্রাস্টের মোস্তফা কামাল আকন্দের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানব বন্ধনে বক্তব্য রাখেন ইক্যুইটিবিডি’র প্রধান সঞ্চালক এবং কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী। এতে আয়োজকদের পক্ষ থেকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মৎস্য শ্রমিক জোটের সচিবালয় সমন্বয়করী মজিবুল হক মনির। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন কোস্ট ট্রাস্টের বরকত উল্লাহ মারুফ, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের বদরুল আলম এবং বাংলাদেশ কিষাণী সভার রেহেনা বেগম।
মজিবুল হক মনির উল্লেখ করেন, উপকূলীয় এলাকার দরিদ্র জেলে যারা ছোট ছোট নৌকায় মাছ ধরেন, সাগর দূষণ এবং প্রাণ বৈচিত্রের ক্ষতি করার ক্ষেত্রে তাদের অবদান খুবই নগণ্য, এর জন্য দায়ী বরং বড় বড় দূষণকারী জাহাজ। সাগর দূষণকারী, ক্ষতিকর বিভিন্ন উপায়ে মাছ ধরে মৎস্য সম্পদ ও প্রাণ বৈচিত্র্যের জন্য প্রধান দায়ীদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে হবে এবং দরিদ্র জেলেদেরকে ৬৫ দিনের মাছ ধরার যে নিষেধাজ্ঞা তার বাইরে রাখতে হবে।
মানববন্ধন থেকে ১৩ দফা দাবি তুলে ধরা হয়, কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দাবি হলো; দরিদ্র ও প্রান্তিক জেলে, যারা ছোট নৌকা দিয়ে উপকূলের কাছাকাছি মাছ আহরণ করেন, তাদের এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে রাখতে হবে, বঙ্গোপসাগরে মৎস ও প্রাকৃতিক সম্পদ, বাস্তুসংস্থান ও জীববৈচিত্রের জন্য বড় হুমকি জাহাজশিল্প, বিদেশি জাহাজের দূষণ ইত্যাদির উপর পরিবেশগত জরিপ (এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট এসেসমেন্ট) করতে হবে এবং তা প্রতিরোধে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে, মাছধরার নিষেধাজ্ঞাকালীন ক্ষতিপূরণ হিসেবে মাসে ভাতা হিসেবে ন্যূনতম ৮০০০ টাকা প্রতি জেলে পরিবারের জন্য বরাদ্দ করতে হবে, নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন ও সাধারণ সময়ে বিদেশী জেলেদের বাংলাদেশ সমূদ্রসীমায় অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে কঠোর নজরদারী নিশ্চিত করতে হবে, মাছ ধরার সকল নৌযানকে নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, ৬৫ দিনের জন্য জেলে পরিবার প্রতি মাত্র ৪০ কেজি চাল বরাদ্দ ভয়াবহ রকম অপ্রতুল। প্রতিটি পরিবারের জন্য মাসিক ৮ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া প্রয়োজন। ভারতের উড়িস্যা ও তামিলনাড়ুতে মাছ ধরা নিষিদ্ধকালীন সময়ে প্রায় ৬ হাজার টাকা করে জেলেদেরকে দেওয়া হয় এবং দরিদ্র জেলেদেরকে নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হয়।
রেহেনা আক্তার বলেন, দরিদ্র জেলেসহ সকল জেলেকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে হবে, যাতে করে তারা সরকারি সুযোগ সুবিধা সহজে পেতে পারেন। এটা দুনীতিও বন্ধ করতে সহায়ক হবে। সমুদ্রে যাওয়া জেলেদের জন্য বিশেষ বীমা সুবিধাও নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বঙ্গোপসাগরের প্রানবৈচিত্রের ক্ষতির জন্য দরিদ্র জেলেরা মাত্র ৪ শতাংশ দায়ি, অথচ তারাই মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। প্লাস্টিক দূষণ, তেল পরিবহন, জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প ইত্যাদি সাগর দূষণের জন্য ৯৬ শতাংশ দায়ি, অথচ এদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার কোনও উদ্যোগ নেই। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা আসলে প্রকৃত প্রান্তিক জেলেদের কোনও উপকারেই আসবে না। আমাদেরকে এক্ষেত্রে দরিদ্র বান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
বদরুল আলম বলেন, বঙ্গোপসাগরে ২৫৬টি বড় মাছ ধরার জাহাজ আছে, যেগুলো পানির নিচের ছোট ছোট মাছসহ প্রায় সব কিছু টেনে তুলে আনে। সাগরের ৪০ মিটার বা তার বেশি গভীর এলাকায় তাদের মাছ ধরার কথা থাকলেও, যথেষ্ট নজরদারীর অভাবের সুযোগে প্রায়ই তার অগভীর এলাকায় চলে আসে।
বরকত উল্লাহ মারুফ বলেন, গত ৪ বছরে বঙ্গোপসাগর এলাকায় প্রায় ১৫ লাখ লিটার তেল ডুবেছে, বাংলাদেশ এবং ভারত থেকে প্রতি বছর প্রায় ৬ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য বঙ্গোপসাগরে ফেলা হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরেরর প্রাণ বৈচিত্র রক্ষায় এ সমস্যাগুলোর সমাধান মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার চেয়েও বেশি জরুরি।