স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাদের পদায়ন গ্রাম অঞ্চলে, তাদের গ্রামেই থাকতে হবে বলে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সরকারী এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রামে ধরে রাখার উপযোগী পরিবেশ তৈরির জন্যও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও সরকারী ভবন নির্মাণ করার সময় খোলামেলা জায়গা, বারান্দা, ভেল্টিলেশন, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখার বিষয়ে খেয়াল রাখতে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে ১৮ হাজার ১৯১ কোটি টাকার সাতটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, একনেকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেন মাঠ পর্যায় থাকেন, তার ব্যবস্থা করতে হবে। একনেক সভা পরবর্তী ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব নুরুল আমিন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, আইএমইডি সচিব আবুল মনসুর মোঃ ফায়জুল্লাহসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সরকারী কর্মকর্তারা গ্রামে থাকতে চান না। আবার তারা গ্রামে থাকলেও তাদের পরিবার থাকে ঢাকায়। এ অবস্থায় তাদের মন পড়ে থাকে পরিবারের কাছে। ফলে জনগণকে সঠিক সেবা দিতে পারেন না। এ অবস্থায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেন পরিবার নিয়ে গ্রামের কর্মস্থলেই থাকতে পারেন। সেজন্য পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এম এ মান্নান ব্রিফিংয়ে বলেন, এখন থেকে যেসব ভবন তৈরি হবে, সেগুলো যেন খোলামেলা হয়, যেন দর্শনার্থীরা সহজেই হাঁটাচলা করতে পারেন এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এছাড়া যেসব পুকুর রয়েছে, সেগুলো কোনভাবেই ভরাট করা যাবে না। প্রয়োজন হলে নতুন করে পুকুর কাটতে হবে, যেন কোথাও আগুন লাগলে সেই পুকুরের পানি ব্যবহার করা যায়। প্রকল্পের জমি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন যেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি প্রকল্পের কাজে অধিগ্রহণ না করা হয়। এমনকি ফসলি জমি অধিগ্রহণ করা যাবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোন প্রকল্পের জন্য কৃষি জমি বা গরিব মানুষ ও বর্গাচাষীদের জমি নেয়া যাবে না। একান্তই যদি জমি নিতে হয়, তাহলে জমির দাম তিনগুণ দেয়ার পাশাপাশি প্রকল্প শুরু আগেই তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া নদীর নাব্যতা ও ভাঙ্গনরোধে প্রতিবছর নদীগুলো ড্রেজিং করারও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে, মঙ্গলবারের অনুষ্ঠিত বৈঠকে মিরসরাইয়ে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনসহ মোট সাতটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সরকারী তহবিল থেকে ৬ হাজার ৬২২ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১১ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা খরচ করা হবে।
একনেকে অনুমোদিত রেলপথ মন্ত্রণালয়ের আখাউড়া-সিলেট সেকশনের মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েলগেজ রেললাইনে রূপান্তর প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ১০৪ কোটি টাকা। চীন সরকার ঋণ দেবে ১০ হাজার ৬৫৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সরকার রেলপথকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই নির্দেশনা দিয়েছেন পর্যায়ক্রমে দেশের সব রেলপথকে ব্রডগেজে রূপান্তরিত করতে হবে। অতীতে যারা রেলকে অবহেলা করেছিলেন, তারা অন্যায় করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘মিরসরাইয়ে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন’ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৯১৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দেবে ৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা এবং ভারত ঋণ দেবে ৯১৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মাণ’ প্রকল্পে ব্যয় হবে ২৪৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। পুরোটাই সরকারী অর্থায়নে এ প্রকল্প চলতি বছরের মার্চ থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ‘মাগুরা-শ্রীপুর জেলা মহাসড়ক বাঁক সরলীকরণসহ সম্প্রসারণ’ প্রকল্পে ব্যয় হবে ২১৫ কোটি ৯ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের পুরোটাই সরকারী অর্থায়নে চলতি বছরের মার্চ থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ‘বিসিএসআইআর ঢাকা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর শুঁটকি মাছ প্রক্রিয়াকরণ এবং ইনডোর ফার্মিং গবেষণা সংক্রান্ত সুবিধাদি স্থাপন’ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৮৯ কোটি টাকা। সরকারী অর্থায়নে এ প্রকল্প চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের মার্চের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার ঘুঘুমারী থেকে ফুলুয়ার চর ঘাট ও রাজিবপুর উপজেলা সদর (মেম্বার পাড়া) থেকে মোহনগঞ্জ বাজার পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গন থেকে বাম তীর সংরক্ষণ’ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৪৭৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা। সরকারী অর্থায়নে এ প্রকল্প চলতি বছরের মে থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে।
একনেক সভায় উপস্থিত ছিলেন, কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী সভায় অংশ নেন। এছাড়াও মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, এসডিজির মুখ্য সমন্বয়ক, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যবৃন্দসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।