ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

কলড্রপ সমস্যার পুরো সমাধান অপারেটরদের হাতে নেই

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ৭ নভেম্বর ২০১৮

কলড্রপ সমস্যার পুরো সমাধান অপারেটরদের হাতে নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কল ড্রপ নিয়ে গ্রাহকের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এ সব অভিযোগের বেশিরভাগই মূলত মোবাইল ফোন অপারেটরদের ঘিরে। কিন্তু একটি কল গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছাতে অপারেটর ছাড়াও এনটিটিএন, আইআইজি, আইসিএক্স, আইজিডব্লিউসহ অনেকগুলো পক্ষ জড়িত রয়েছে। অথচ তাদের সেবার মান নিয়ন্ত্রণের কোন ক্ষমতা অপারেটরদের নেই। তাই স্বাভাবিকভাবেই কল ড্রপ সমস্যার পুরো সমাধান অপারেটরদের হাতে নেই। মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে কোয়ালিটি অব সার্ভিস (কল ড্রপ) নিয়ে টিআরএনবির সঙ্গে মোবাইল আপারেটরদের সংগঠন এ্যামটবের কর্মশালায় এ কথা বলা হয়। কর্মশালায় আলোচনায় উঠে এসেছে, মোবাইল অপারেটরদের সেবার মান নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা যতটা সোচ্চার, অন্য সব পক্ষের কোয়ালিটি অব সার্ভিসের বিষয়ে তেমনটা দেখা যায় না। এখন পর্যন্ত ভয়েস কলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত অন্য পক্ষ বা প্রতিষ্ঠানের কিউওএস বিষয়ে কোন প্যারামিটার বা সূচক নির্ধারণ করা হয়নি। টেলিযোগাযোগ একটি ওয়্যারলেস প্রযুক্তির সেবা। কারিগরি সীমাবদ্ধতার কারণেই এখানে একটি নেটওয়ার্ককে সম্পূর্ণ কল ড্রপ মুক্ত করা সম্ভব না। এ সব কারিগরি সীমাবদ্ধতার মধ্যে রয়েছে তরঙ্গের স্বল্পতা, ঘন ঘন ফাইবার কেটে যাওয়া, নিম্নমানের হ্যান্ডসেট, জনসংখ্যার ঘনত্বের মতো অনেকগুলো বিষয়। বাংলাদেশে তরঙ্গের উচ্চ মূল্য কল ড্রপ সমস্যার একটি অন্যতম কারণ। কারণ তরঙ্গ ব্যবহার করেই মূলত টেলিযোগাযোগ সেবা দেয়া হয়। বাংলাদেশে প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের দাম এখন বিশ্বের সব দেশের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ, এর বিপরীতে গ্রাহক প্রতি আয় এখন মাত্র ১৩০ টাকা। তরঙ্গের উচ্চ মূল্যের কারণে বিভিন্ন ব্যান্ডের ১৮৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গ এখনো বাংলাদেশে অব্যবহৃত রয়ে গেছে। বিপুল পরিমাণ এ অব্যবহৃত তরঙ্গের বিষয়ে সরকারের একটি নীতিমালা থাকা দরকার। তরঙ্গের ন্যায্য দাম নির্ধারণ করে অপারেটরদের দেয়া হলে কল ড্রপের মতো সমস্যা সমাধানে তা খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। অপারেটরদের বাড়তি তরঙ্গের চাহিদা পূরণ করে বিটিআরসি প্রয়োজনে কোয়ালিটি অব সার্ভিসের বিষয়ে আরও কঠোর হতে পারে। কল ড্রপের সমস্যা সমাধানে তরঙ্গের পাশাপাশি ফাইবার অপটিক বা এনটিটিএন অপারেটরের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এনটিটিএন নীতিমালা অনুযায়ী, এনটিটিএন অপারেটরের কাছ থেকে মোবাইল ফোন অপারেটরদের ফাইবার লিজ পাওয়ার কথা। কিন্তু ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে এনটিটিএন অপারেটররা তাদের ফাইবার অপারেটরদের লিজ দেয় না। ঘন ঘন ফাইবার কাটা পড়া এবং নিজস্ব ফাইবার না থাকায় কল ড্রপের হার নিয়ন্ত্রণে রাখা অপারেটরদের জন্য অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। মোবাইল ফোন অপারেটরদের জন্য বিটিএস স্থাপনের জায়গা পাওয়া এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রেডিয়েশন নিয়ে সাধারণ মানুষের নেতিবাচক ধারণার কারণে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নতুন করে টাওয়ার বসাতে গিয়ে স্থান পাওয়া যাচ্ছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, মিরপুর ডিওএইচএস, বারিধারা ডিওএইচএস, কুড়িল, বনশ্রী, চট্টগ্রাম বন্দর, ডিওএইচএস, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সল্টগোলা মোড়-সারা দেশে এমন অনেক এলাকায় বিটিএস স্থাপনে অপারেটররা অনুমতি পাচ্ছে না। সাভারের রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পরে অনেক গার্মেন্টস ভবনের ওপরে থাকা মোবাইল ফোন টাওয়ার অপারেটররা সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। নতুন লাইসেন্সপ্রাপ্ত টাওয়ার কোম্পানির জন্যও এ বিষয়গুলো সমাধান করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কর্মশালায় বলা হয়, হ্যান্ডসেটের নিম্নমানও কল ড্রপের একটি অন্যতম কারণ। এক হিসেবে দেখা গেছে, বাংলাদেশে আমদানি হওয়া ৬০ শতাংশ হ্যান্ডসেটই অত্যন্ত নিম্নমানের। ফোরজি উপযোগী হ্যান্ডসেটের ব্যবহার একটি জায়গায় এসে আটকে গেছে। ফোরজি হ্যান্ডসেট আমদানিতে উচ্চ করের কারণে তা সাধারণ ব্যবহারকারীদের ক্রয় সীমার মধ্যে এখনো আসেনি। অনেক সীমাবদ্ধতার পরেও তিন বেসরকারী মোবাইল ফোন অপারেটরের কল ড্রপের পরিমাণ বিটিআরসির নির্ধারিত সীমার নিচে রয়েছে। বিটিআরসির মানদ- অনুসারে, অপারেটরদের কল ড্রপের হার মোট কলের ২ শতাংশের নিচে থাকতে হবে। তিন অপারেটরের কল ড্রপের হার দশমিক ৫ থেকে দশমিক ৮ শতাংশের মধ্যে, অর্থাৎ ১ শতাংশের কম। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে কল সাকসেস রেটের হার ৯৯ শতাংশ। অর্থাৎ একজন গ্রাহক মোবাইলে ফোন করলে ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই তিনি কলটি সফলভাবে করতে পারেন। কল ড্রপ সমস্যার বিষয়টি তাই সার্বিকভাবে দেখতে হবে। এককভাবে শুধু মোবাইল ফোন অপারেটরদের দোষারোপ করে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। টেলিযোগাযোগ ইকোসিস্টেমে যুক্ত সব পক্ষকে নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যার বাস্তবভিত্তিক সমাধানের মাধ্যমে কল ড্রপের মতো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
×