স্টাফ রিপোর্টার ॥ শ্রমবাজারে ক্রেতাদের (বায়ার) একচেটিয়া আধিপত্যের প্রভাবে একজন শিল্পশ্রমিক তার উৎপাদন ক্ষমতার চেয়ে অনেক কম বেতন বা মজুরি পান। আফ্রিকার চারটি দেশ ক্যামেরুন, ঘানা, কেনিয়া এবং জিম্বাবুয়ের শ্রমবাজারের উপর গবেষণা করে দেখা গেছে, এইসব দেশের উৎপাদন খাতের (ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টর) শ্রমিকদের গড় প্রান্তিক উৎপাদন ক্ষমতা তাদের গড় মজুরীর চেয়ে ২ থেকে ৩ গুণ বেশি। অর্থাৎ উৎপাদন ক্ষমতার তুলনায় তাদের মজুরি অর্ধেকের চেয়েও কম। দারিদ্র এবং বেকারত্বের চাপ আছে এমন উন্নয়নশীল দেশগুলোর শ্রমবাজারে একারনে মজুরি বৈষম্যও বেশি হয়। ‘লেবার মার্কেট মনোপসনি পাওয়ার ইন আফ্রিকা’স ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টর’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিউল হক। বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. কাজী আলী তৌফিক এতে সভাপতিত্ব করেন।
‘মনোপসনি’ অর্থনীতির একটি পরিভাষা, যা শ্রমবাজারের গতিপ্রকৃতি বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। এর মাধ্যমে শ্রমবাজারে একজন বড় ক্রেতার (বায়ার) শ্রমের মূল্য নির্ধারক ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। প্রতিযোগিতার পরিবশে না থাকলে বড় ক্রেতা সাধারণত শ্রমের দাম কমাতে নিয়ামক হিসেবে কাজ করেন। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, নব্বই দশক এবং চলতি শতকের শুরুর দিকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ক্যামেরুন, ঘানা, কেনিয়া এবং জিম্বাবুয়ের শ্রমবাজারে ত্রুটি আছে। আদর্শ প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থা থেকে বিচ্যুতির কারণে এসব দেশের শিল্পশ্রমিকরা তাদের শ্রমের উপযুক্ত মূল্য থেকে কমপক্ষে ৪৩ থেকে ৬২ শতাংশ কম মজুরি পায়, যেখানে নিয়োগকারী মালিকরা তাদের কাছ থেকে মজুরির চেয়েও ১২ থেকে ২১ শতাংশ বেশি শ্রম নেয়। আর তাদের উৎপাদন ক্ষমতার বাকী ৬ থেকে সাড়ে ৯ শতাংশ অদক্ষ ব্যবস্থাপনার কারনে পুরোপুরিভাবে হারিয়ে যায় (ডেডওয়েট লস)। এক প্রশ্নের জবাবে সামিউল হক বলেন, বাংলাদেশের শ্রমবাজারে মনোপসনির প্রভাব কতটুক তা গবেষণাসাপেক্ষ। অবশ্য গবেষণা করার মতো তথ্যও আমাদের কাছে নেই। এক্ষেত্রে বিআইডিএস বা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নিতে পারে। এতে গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের শ্রমের উপযুক্তমূল্য নির্ধারণ করা সহজ হবে।