স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে অধিকার ভিত্তিক নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বৈশি^ক সহায়তামূলক সংলাপের জন্য সরকারকে যথাযথ প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এই সংলাপের আওতায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অতি ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপন্ন দেশগুলোর জন্য বৈশ্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়। এ ক্ষেত্রে ইতিহাস এবং বর্তমানের আলোকে প্রমাণ-সাপেক্ষ বাস্তবতা তুলে ধরার জন্য প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘কপ ২৩ জলবায়ু আলোচনার অগ্রগতিঃ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিতব্য বৈশ্বিক সহায়তামূলক সংলাপে সরকারকে শক্তিশালী ও প্রমাণভিত্তিক আলোচনার প্রস্তুতি নিতে হবে’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সেন্টার ফর এ্যাডভান্স স্টাডিজের চেয়ারম্যান ড. আতিক রহমান, ফোরাম অন এনভায়রনমেন্টাল জার্নালিস্ট, বাংলাদেশের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম চৌধুরী, বাংলাদেশ ক্লাইমেট জার্নালিস্ট ফোরামের (বিসিজেএফ) সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন। এতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ইক্যুটিবিডি’র সৈয়দ আমিনুল হক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইক্যুইটি বিডির রেজাউল করিম চৌধুরী।
ড. আতিক রহমান বলেন, কপ-২৩ ’তে কৃষি ও নারী-পুরুষ সমতা বিষয়ক যে আলোচনা অগ্রগতি হয়েছে এটা ভাল। আমরা তাকে স্বাগত জানাই, কিন্তু তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার কমানোর লক্ষ্যমাত্রা প্রণয়নে কোনও অগ্রগতি নেই। কপ-এর ওয়ার্কিং গ্রুপে বাংলাদেশের পুনর্নির্বাাচিত হওয়ার বিষয়টি একটি ভাল দিক। পরবর্তী সংলাপ বাংলাদেশের জন্য ভাল কিছু অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ বরাবরই তুলনামূলকভাবে কম প্রস্তুতি নিয়ে কপ বা জলবায়ু সম্মেলনগুলোতে অংশগ্রহণ করে আসছে। গত কয়েক বছর ধরে দেশের অবস্থান কী তা জানা কঠিন হয়ে গেছে, আর এ কারণে নাগরিক সমাজ, যারা কপ-এ অংশগ্রহণ করছেন, তাদের পক্ষে এ ক্ষেত্রে সহায়ক বা যথাযথ ভূমিকা পালন করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কপ-এ অংশগ্রহণ করা সরকারী প্রতিনিধি দল এবং নাগরিক সমাজের মধ্যে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান দূরত্ব স্পষ্ট এবং এই দূরত্ব ঘোচানোর চেষ্টা করতে হবে। তিনি আরও বলেন যারা সরকারী প্রতিনিধি হিসেবে কপে যান তাদের জন্যও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করা জরুরী, অন্যথায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সৈয়দ আমিনুল হক বলেন, কপ ২৩ এর একমাত্র সাফল্য আসন্ন সহায়তামূলক সংলাপের মূল কাঠামো এবং নীতিমালাগুলো প্রণয়ন। এটি অবশ্য বাংলাদেশের জন্য নিজের অবস্থান তুলে ধরে আন্তর্জাতিক সহানুভূতি পাওয়ার সুযোগ। আর এই কারণেই আমাদের সরকারের উচিত এই সুবিধাটা নিতে প্রমাণভিত্তিক শক্তিশালী অবস্থান তুলে ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং অতি বিপন্ন দেশগুলোর জন্য অভিযোজন এবং জলবাযু প্রশমনের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সহযোগিতা নিশ্চিত করা।
কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, অতি বিপন্ন দেশগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় লস এ্যান্ড ডেমেজ বা ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত বিষয়ে যথাযথ কোনও কাঠামোতে পৌঁছানোর ব্যর্থতার কারণে আমরা উদ্বিগ্ন। ওয়ারশ ইমপ্লিমেন্টেশন ম্যাকানিজম এর পাঁচ বছরের কর্মপরিকল্পনা এবং অর্থের উৎস অনুসন্ধানে বিশেষ কমিটি গঠনের মতো তথাকথিত অগ্রগতি অতি বিপন্ন দেশগুলোর স্বার্থ এবং প্রত্যাশাকে আরও পিছিয়ে দিয়েছে। তবে আমাদের সরকার যদি ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ে বৃদ্ধিবৃত্তিকভাবে তথ্য উপাত্ত তুলে ধরে আলোচনা করতে পারে তবে আমাদের জন্য এক্ষেত্রে কিছু সুযোগ আছে।
বিসিজেএফ এর সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন বলেন, আসন্ন সহায়তামূলক সংলাপ তিনটি বিষয়ের উপর অনুষ্ঠিত হবে- আমরা কারা, আমরা কোথায় যেতে চাই এবং আমরা সেখানে কিভাবে যেতে চাই। এই সবগুলো বিষয় বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সরকারের উচিত এসব বিষয়ে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করা। এর আগে দেশের শক্তিশালী অবস্থান তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা জরুরী।