স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইএমএফ ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার চাপে সরকার কৃষিতে ভর্তুকি হ্রাস করছে। আন্তর্জাতিক এসব গোষ্ঠীর চাপে ভর্তুকি কমানো হলে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। এতে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। তাই আসন্ন বাজেটে কৃষির জন্য ভর্তুকি বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে কৃষিতে বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ রাখতে হবে।
রবিবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি কনফারেন্স লাউঞ্জে ‘বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ও আইএমএফ’র চাপে কৃষিতে ভর্তকি হ্রাস খাদ্য নিরাপত্তার জন্য আত্মঘাতী’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে ১৪ টি কৃষক সংগঠনের পক্ষে এসব দাবি জানানো হয়। এতে লিখিত বক্তব্যে সুনির্দিষ্ট ৭ টি দাবি উত্থাপন করা হয়। এতে কোস্ট ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক মোস্তফা কামাল আকন্দের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন একই সংগঠনের আরেক সহকারী পরিচালক মো. মজিবুল হক মনির।
প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে মজিবুল হক মনির বলেন, দেশের প্রায় ৫০ ভাগ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। মোট শ্রম শক্তির প্রায় ৪৫ ভাগ নিয়োজিত কৃষিখাতে। তবে কৃষিতে প্রবৃদ্ধির হার নিয়মিতভাবেই নিন্মমুখী। ২০১০ সালে কৃষিতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ, ২০১৬ সালে এসে সেটা দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ। নানা কারণে অকৃষি খাতে কৃষি জমির ব্যবহার বাড়ায় প্রতি বছর ১ শতাংশ হারে কৃষি জমি হ্রাস পাচ্ছে। দ্রুত নগরায়নের কারণে খাদ্য নিরাপত্তা ভীষণ হুমকির মুখে পড়বে। এই অবস্থা মোকাবেলায় কৃষির জন্য বরাদ্দ যেখানে বাড়ানোর দরকার, সেখানে প্রায় প্রতিবছর আনুপাতিক হারে কৃষির জন্য বরাদ্দ কমছে। তিনি বলেন, বাজেটের আকার যে হারে বাড়ছে, সে হারে কৃষিতে বরাদ্দ বাড়ছে না। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাজেটের আকার বাড়ে প্রায় ২৯ শতাংশ। অথচ বছর ব্যবধানে কৃষির জন্য বরাদ্দ বেড়েছে মাত্র ১৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। তাই কৃষিখাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। তা হতে হবে বাজেটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি বদরুল আলম বলেন, গত বেশ কয়েক বছর ধরেই কৃষক তার পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। প্রান্তিক কৃষকের কষ্টের সুফল ভোগ করছে কতিপয় মধ্যস্বত্বভোগী। কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে আমরা আলাদা ন্যায্য মুল্য কমিশন চাই। কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান চাল সংগ্রহের সময়ও পরিবর্তন করতে হবে।
বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন (জাই) এর সভাপতি জায়েদ ইকবাল খান বলেন, আমাদের কৃষিকে বাঁচাতে হলে কৃষি জমি বাঁচাতে হবে। প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ মানুষ নদী ভাঙ্গনের কারণে সর্বস্ব হচ্ছে। নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে উপকূলীয় এলাকায় বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে।
ইক্যুইটিবিডি’র সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আমিনুল হক বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে কৃষি পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে ২০৩০ সালের মধ্যে সকল ধরনের ভর্তুকি বন্ধ করতে হবে। উদ্বৃত্ত উৎপাদন না হলেও বাংলাদেশের চাল রফতানির সিদ্ধান্ত ভয়ংকর ভুল। কারণ চালকে রফতানি পণ্য হিসেবে বিবেচনা করলে সরকারকে ধান চাষের ক্ষেত্রে সকল ভর্তুকি বা সহায়তা বন্ধ করে দিতে হবে।
কেন্দ্রীয় কৃষক মৈত্রীর সভাপতি সাজেদা বেগম বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব মোকাবেলায় কৃষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধির বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে আয়োজকরা বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিকে বাজার তৈরি করে দেয়ার জন্য কৃষিতে ভর্তুকি কমানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে দেশে খাদ্য ঘাটতি থাকার পরও খাদ্য রফতানিতে নাম লিখিয়েছে সরকার। সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলের জন্যই এটি করা হয়েছে। কিন্তু যান্ত্রিকীরণে উন্নয়ন সহায়তা (ভর্তুকি) বৃদ্ধি করছে সরকার, এটিকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, উন্নয়ন সহায়তা কৃষকের দায়। যান্ত্রিকীকরণকে আমরাও সমর্থন করি। কিন্তু এই উন্নয়ন সহায়তায় প্রান্তিক কৃষক উপকৃত হচ্ছে না। উপকৃত হচ্ছে কেবল বড় বড় কৃষক। এভাবেই দশ বছর ব্যবধানে প্রান্তিক কৃষক হারিয়ে যাচ্ছে। অন্য আরেক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, ২০৩০ সাল পর্যন্ত ভর্তুকি রাখতে হবে, যাতে কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য পায়। ভর্তুকি উঠিয়ে দিলে চালের দাম বেড়ে যাবে। তা ৮০ টাকায়ও উন্নীত হতে পারে। এতে সাধারণ মানুষ না খেয়ে মরবে।