সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে এখন একটি প্রতিকূল অবস্থা চলছে। যখন একটি দল বা জোট রাজনীতির নামে মানুষকে পুড়িয়ে মারছে, শিশুদের পুড়িয়ে মারছে তখন অধ্যাপক সিরাজুল আকবরের মতো একজন নিবেদিতপ্রাণ অত্যন্ত জনপ্রিয় রাজনীতিক ও প্রথিতযশা শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে হারালাম। তাঁর এই হঠাৎ মৃত্যু শুধু আওয়ামী লীগ ও দেশেরই অপূরণীয় ক্ষতি হয়নি, এই প্রতিকূল অবস্থায় আক্রান্ত শিশুরা তাঁর চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত হলো।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. সিরাজুল আকবরের মৃত্যুতে আনীত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আলোচনা শেষে শোক প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় আরও অংশ নেন বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ, সরকারী দলের চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, মাহবুব উল আলম হানিফ, খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত, সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, কামরুন লায়লা জলি, মনিরুল ইসলাম, ডা. ইউনুস আলী সরকার, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী, হাজী মোহাম্মদ সেলিম ও জাতীয় পার্টির রুহুল আমিন হাওলাদার। এদিকে অধিবেশন শুরুর আগে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে যত বারই তাঁকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে ততবারই, বিপুল ভোটের ব্যবধানে মাগুরা-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই নেতা মাগুরায় অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। শুধু একজন সফল রাজনীতিকিই নন, দেশের একজন খ্যাতনামা শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও ছিলেন। দুই মেয়াদে রেডক্রিসেন্টের দায়িত্ব পালন করে তিনি এই সংস্থাটিকে মানুষের সেবায় কাজে লাগিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলে এই সংস্থায় সংঘটিত অনিয়ম-দুর্নীতি দক্ষ হাতে দূর করে মানুষের আস্থার একটি সংস্থায় পরিণত করে গেছেন।
তিনি বলেন, চার চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েও কাউকে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করেননি প্রয়াত এই সংসদ সদস্য। রাজনীতির পাশাপাশি শিশু বিশেযজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন। নেতা হয়ে গেছেন বলে কখনও চিকিৎসায় অবহেলা করেননি। তাঁর হঠাৎ মৃত্যুতে আওয়ামী লীগ হারিয়েছে একজন নিষ্ঠাবান ও নিবেদিতপ্রাণ নেতা ও সংসদ সদস্যকে, আর জাতি একজন নিবেদিত দক্ষ শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে হারাল। এ ক্ষতি পূরণ হবার নয়। প্রধানমন্ত্রী এ সময় প্রয়াত নেতা সিরাজুল আকবরের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ বলেন, সিরাজুল আকবর একজন অসাধারণ আর্তমানবতা সেবায় নিবেদিত প্রাণ মানুষ ছিলেন। তিনি অত্যন্ত ভাল মানুষ ছিলেন, ব্যবহার ছিল অমায়িক, অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। এমন ব্যক্তিত্ব ও প্রথিতযশা চিকিৎসকের মৃত্যু দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হলো। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, তিনি ততদিন মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।
চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, সিরাজুল আকবর একজন দক্ষ চিকিৎসক, শিক্ষক ও রাজনীতিক ছিলেন। তাঁর প্রাণখোলা হাসি আমরা আর দেখব না। দশম জাতীয় সংসদের ৫ জন সংসদ সদস্যকে আমরা হারালাম। এমন সদালাপী ও সজ্জ্বন মানুষের মৃত্যু কেউ আশা করে না।
জাতীয় পার্টির রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, অত্যন্ত সজ্জন, সদালাপী ও অমায়িক ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন অধ্যাপক ডা. সিরাজুল আকবর। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন তিনি। সাদা মনের মানুষ সদা হাস্যোজ্জ্বল ব্যক্তিটি হঠাৎ করে আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন ভাবতেও খারাপ লাগছে।
মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, শুধু জাতীয় সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতাই ছিলেন না- এলাকার অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। গরিব-দুস্থ মানুষের প্রতি তিনি সবসময় ছিলেন দয়ালু। মৃত্যু অনিবার্য, কিন্তু হঠাৎ এমন সদালাপী, মিষ্টভাষী ব্যক্তিত্বের মৃত্যু সত্যিই কারও কাম্য ছিল না।
দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা অনুষ্ঠিত ॥ জাতীয় সংসদ অধিবেশন শুরুর আগে দক্ষিণ প্লাজায় প্রয়াত সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সিরাজুল আকবরের মরদেহ আনা হলে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। পৌনে ৫টায় প্রথম জানাজা শেষে মরহুমের কফিনে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতির পক্ষে শ্রদ্ধা জানান তাঁর কার্যালয়ের অতিরিক্ত সচিব।
এছাড়া মরহুমের কফিনে আরও শ্রদ্ধা জানান, বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ, স্পীকারের পক্ষে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া, চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজসহ হুইপবৃন্দ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবর্গ, জাতীয় সংসদদের সদস্যবৃন্দ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমানসহ বিভিন্ন শ্রেণী- পেশার ব্যক্তিবর্গ।
মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, প্রাথমিক ও গণ শিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার প্রমুখ।