বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের ক্যাপিটাল মার্কেটকে ক্যাসিনো বানানো হয়েছে। এটাকে ক্যাপিটাল মার্কেট বানানো হয়নি। তবে বিএনপি ক্ষমতায় এলে এই বাজারকে ধারণ করবে এবং অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করবে।
শনিবার ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক আলোচনায় পুঁজিবাজার : দর্শন ও অনুশীলন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব বলেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
আর প্যানেল আলোচক হিসেবে ছিলেন বিএসইসি কমিশনার মো. মোহসিন চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কাউন্সিলের সদস্য মো. মোবারক হোসাইন, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ, জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) যুগ্ন আহ্বায়ক ড. তাজনুভা জাবিন, আইসিএমএবির সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আমীর খসরু বলেন, গত ১৫ বছরে ক্যাপিটাল মার্কেটকে লুটপাট করতে করতে এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যেখানে ফ্লোর প্রাইস দিতে হয়েছে। লুটপাট করার মতো আর জায়গা রাখা হয়নি। লুট করে খালি করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে বিনিয়োগকারীরা লোকসানেও শেয়ার বিক্রি করতে পারে না।
তিনি বলেন, বিগত কোনো সরকার ক্যাপিটাল মার্কেটকে ধারণ করেনি। দুর্ভাগ্যবশত শেয়ারবাজারও উন্নত হয়নি। এটাকে সব সময় অর্থনীতির বাইরের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। অথচ অর্থনীতির উন্নয়নে ক্যাপিটাল মার্কেটের ভূমিকার বিকল্প নেই। ক্যাপিটাল মার্কেট অর্থনীতির প্রাণশক্তি। তাই আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে ক্যাপিটাল মার্কেটকে ধারণ করা হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে যদি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়, আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞাসা করেন আমি বলব, এক নম্বর হলো বিনিয়োগ, দুই নম্বর হলো বিনিয়োগ এবং তিন নম্বরও হলো বিনিয়োগ। এর বাইরে কিছু নেই। এই দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে আমাদের বিনিয়োগে ফোকাস করতে হবে। বিনিয়োগ না হলে কি ভাবে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের সরকার ও বেসরকারি বিনিয়োগের অর্থের উৎস হতে হবে ক্যাপিটাল মার্কেট। ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে সরকারের ঋণ। ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে প্রাইভেট সেক্টরের ঋণ, দুটিই সম্ভব। আমাদের দেশে সরকারের ঋণের জন্য আইএমএফের পিছে ঘুরছি।
আমরা ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের জন্য আইএমএফের পিছেপিছে ঘুরছি, এটা দেশের জন্য ৪ বিলিয়ন ডলার কোনো টাকা নয়। কিন্তু আমরা ৪ বিলিয়ন ডলারের জন্য আইএফএম, বিশ্ব ব্যাংকের কাছে যাচ্ছি।
আমীর খসরু বলেন, বিশ্বে বছরে ক্যাপিটাল মার্কেটে ১০০ ট্রিলিয়ন ডলার এলোকেশন হয়। সর্ভিন ফান্ড (সর্বভৌম তহবিল), ইন্স্যুরেন্স, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে থেকে এই অর্থ আসে। এর মধ্যে ভিয়েতনামেই ৩০০ বিলিয়ন ডলার, বাংলাদেশের সংখ্যাটা আমি না বললেই ভালো। ৩০০ বিলিয়ন না, বাংলাদেশে ১০০-২০০ বিলিয়ন ডলার আনতে পারলেই বাংলাদেশের বিনিয়োগের চিত্রটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, একটা গ্রুপ ক্যাসিনোর মালিক। আপনি ক্যাসিনোতে ঢুকবেন, খেলবেন। কিন্তু দিনের শেষে প্রফিট ক্যাসিনো মালিকের। কেউ হারবে, কেউ জিতবে। দিন শেষে সব মুনাফা ক্যাসিনো মালিকের কাছে যাবে। আপনি তো ক্যাপিটাল মার্কেটে সেটা করতে পারছেন। বাংলাদেশে এটা বিশেষ করে ঘটেছে গত ১৫ বছরে।
তিনি বলেন, আমরাই (বিএনপি) বাংলাদেশে প্রথম বিদেশি বিনিয়োগ এলাও করেছি। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে যত সংস্কার হয়েছে, তা বিএনপির আমলেই হয়েছে।
আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশে ফরেন ইনভেস্টর প্রটেকশন আইন বিএনপির সময়ে পাস করা হয়েছে। তারপরেই বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আসা শুরু হয়েছে। তারপর বাংলাদেশে এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন হয়েছে। ক্যাপিটাল মার্কেটে যে বিনিয়োগগুলো এসেছে, তার বেশিরভাগ বিএনপির সময়ে এসেছে। তিনি বলেন, আমার পরিচিত অনেকেই এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগে আসতে চায়। তারা একটি ফ্রি ফেয়ার ইলেকশনের অপেক্ষায় আছেন। নির্বাচন হওয়ার পর তারা আসতে চায়, আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। অনেকে ১০ বিলিয়ন ডলার ফান্ড ম্যানেজ করেছে, অনেকে ২০ বিলিয়ন ডলার ফান্ড ম্যানেজ করেছে।