ভিন্ন মতের মানুষের ওপর সরকার নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সাজানো মামলায় ফরমায়েশি রায়ের মাধ্যমে অন্যায়ভাবে সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি নির্বাহী কমিটির সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোয় উদ্বেগ প্রকাশ করছি। অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও সাজা বাতিল করে নিঃশর্ত মুক্তির আহ্বান জানাচ্ছি।
ফখরুল বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী লীগ শাসকগোষ্ঠী এখন আরও হিং¯্র হয়ে উঠেছে। মিথ্যাচার, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও অপকৌশলের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ গণতন্ত্রমনা বিরোধী দল, ভিন্ন মত ও পথের মানুষদের ওপর নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে অব্যাহতভাবে।
ফখরুল বলেন, বানোয়াট মামলায় সাজা প্রদানসহ জামিন নামঞ্জুর করে বিরোধী নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠানোর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার দেশে নব্য বাকশালী শাসন কায়েম করেছে। সারাদেশে প্রতিনিয়ত সরকারের মদতে বানোয়াট মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের সাজা প্রদানসহ জামিন নামঞ্জুর করা হচ্ছে। মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনা আওয়ামী জুলুমেরই আরেকটি বহির্প্রকাশ।
দেশে দুঃসময় চলছে ॥ দেশে কঠিন দুঃসময় চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত নাগরিক স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। নাগরিক স্মরণ সভার আয়োজন করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণ সভা উদ্যাপন কমিটি।
ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক সংকট, অর্থনৈতিক সংকট ভয়াবহভাবে আমাদের আক্রমণ করেছে। এখানে বিচার ব্যবস্থা পুরোপুরিভাবে দলীয়করণ হয়ে গেছে, এখানে অর্থনীতিকে পুরোপুরিভাবে নিজেদের মতো করে তারা সেখানে লুটপাট চালাচ্ছে। আজকে রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে, নির্বাচনী ব্যবস্থাকে একেবারে উপড়ে ফেলা হয়েছে। কিছু নেই এখন অবশিষ্ট।
ফখরুল বলেন, ঐক্যের কথা আমরা বলি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা আমরা বলি, সেই চেতনার লেশমাত্র অবশিষ্ট নেই। যার জন্যে জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাহেবরা লড়াই করছিলেন। সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে যদি আবার আমাদের ফিরিয়ে আনতে হয়, বাংলাদেশকে যদি সত্যিকার অর্থে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আমরা পরিণত করতে চাই তাহলে আমাদের অবশ্যই সকলকে নতুন করে চিন্তা করে নতুনভাবে আবার বলীয়ান হয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অনুপ্রেরণায় আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
ফখরুল বলেন, আসুন আমরা এই প্রতিজ্ঞা করি, কে কি বলল সেটা ভাবার দরকার নেই, আমাদের মধ্যে যে আশা, যে আকাক্সক্ষা আছে আমরা যারা একাত্তরে যুদ্ধ করেছি, আমরা যারা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছি, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য যারা প্রাণ দিয়েছে, যারা গুম হয়েছে তাদের সকলকে সেই সম্মানটুকু দেওয়ার জন্য আমাদের আজকে একটা মাত্র দায়িত্ব সেটা হচ্ছে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে ।
মির্জা ফখরুল বলেন, ভয়াবহ দুঃশাসন আমাদের সমস্ত ভালো অর্জনগুলোকে কেড়ে নিয়েছে, আমাদের প্রতিমুহূর্তে পঙ্গু করে ফেলেছে, আমাদের পুরোপুরি একটা দাসে পরিণত করছে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, এই দুঃশাসনের অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমরা হাত-পা ছুড়ছি। আমরা যারা রাজনীতি করি, রাজনৈতিক কর্মী আছি তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি। আমি নিজেই নির্বিচারে নির্যাতিত হচ্ছি, অনেকে তাদের জীবন দিচ্ছেন। তার পরও এ সরকারকে সরানো যাচ্ছে না, এটাই বাস্তবতা।