ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

adbilive
adbilive
ঢাকার রাজপথে আওয়ামী লীগের মৃত্যু হয়েছে, আর দাফন হয়েছে দিল্লিতে: সালাহউদ্দিন

ঢাকার রাজপথে আওয়ামী লীগের মৃত্যু হয়েছে, আর দাফন হয়েছে দিল্লিতে: সালাহউদ্দিন

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, "আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটেছে ঢাকার রাজপথে, আর তাদের দাফন হয়েছে দিল্লিতে।" তিনি বলেন, সম্প্রতি জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘মহারাষ্ট্র মডেল’ অনুসরণ করে বাংলাদেশে প্রায় ১,৪০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। শতকরা ৬৬ ভাগ ক্ষেত্রে মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, এমনকি সামরিক অস্ত্র এবং হেলিকপ্টার গানশিপ থেকেও গুলি ছোড়া হয়েছে সাধারণ মানুষের উপর। এই গণহত্যার পরেও সরকার কোনো অনুশোচনা প্রকাশ করেনি, দুঃখপ্রকাশ বা ক্ষমা তো দূরের কথা, বরং দিল্লিতে বসে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকারীদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আওয়ামী লীগকে একটি ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক দল হিসেবে বিচার করার দাবি জানিয়েছি। গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে শুধু ব্যক্তিকে নয়, রাজনৈতিক দলকেও বিচারের আওতায় আনতে হয়। আওয়ামী লীগ সেই বিচারেরই যোগ্য।” তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাস একদলীয় শাসন, দমন-পীড়ন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে ভরা। তিনি বলেন, “শুধু জুলাই মাসের গণহত্যাই নয়, বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় ৭,০০০ বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে, অপহরণ করেছে, নির্যাতন চালিয়েছে। এসবই বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।” আওয়ামী লীগের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, দলটি জন্মলগ্ন থেকেই একদলীয় শাসন কায়েমের চেষ্টায় লিপ্ত। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারিতে মাত্র ১৩ মিনিটের মধ্যে সংবিধান পরিবর্তন করে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, যা ছিল গণতন্ত্র হত্যার স্পষ্ট নজির। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালে তারা আবার গণহত্যা চালিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটিয়েছে। অর্থনৈতিক দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে সালাহউদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে একটি ‘সাদা কাগজ কমিটি’ গঠন করা হয়েছিল, যার রিপোর্ট অনুযায়ী গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের কারণে ব্যাংক খাতে লক্ষ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, এই অর্থনৈতিক দুর্নীতির পরিমাণ এতটাই বেশি যে, সেই অর্থ দিয়ে ২৪টি পদ্মা সেতু তৈরি করা যেত। তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে এবং গত ১৫ বছরে মোট ২৯ লক্ষ কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার করা হয়েছে, যা দেশের সম্পদের অপচয় এবং জনগণের সঙ্গে সরাসরি প্রতারণা। সালাহউদ্দিন আহমেদ তাঁর বক্তব্যে দাবি করেন, এইসব অনাচার, নিপীড়ন, দুর্নীতি এবং গণতন্ত্রবিরোধী কার্যক্রমের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ তার রাজনৈতিক পরিণতি ডেকে এনেছে। “বাংলাদেশের মানুষ আজ আওয়ামী লীগের নিপীড়ন থেকে মুক্ত,”—উল্লেখ করেন তিনি। ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=fSg5Q-5gn2M

এ যেন ভূতের মুখে রাম নাম, গাজাবাসীর কষ্টের বর্ণনা দিলেন ট্রাম্প!

এ যেন ভূতের মুখে রাম নাম, গাজাবাসীর কষ্টের বর্ণনা দিলেন ট্রাম্প!

গাজায় দীর্ঘ দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে অবিরাম যুদ্ধ, ধ্বংস, মৃত্যু আর অনাহারের মিছিল। গাজার পরিস্থিতি এমন এক স্তরে পৌঁছেছে, যেখানে প্রতিদিনের জীবনই যেন বেঁচে থাকার এক দুঃস্বপ্ন। সেই গাজা নিয়েই এবার মুখ খুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প— যিনি এক সময় ফিলিস্তিনি স্বপ্নভঙ্গের প্রতীক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে মধ্যপ্রাচ্য সফরের শেষ দিনে ট্রাম্প বলেন, "গাজায় বহু মানুষ না খেয়ে আছে। আমরা তাদের পাশে থাকবো। গাজার সার্বিক পরিস্থিতি আমাদের নজরে রয়েছে। অনেক বাজে কিছু ঘটছে। অনেক মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। আমরা তাদের যত্ন নেব।"

যুদ্ধবিরতি না হলে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে ঝুঁকতো ভারত-পাকিস্তান: ট্রাম্প

যুদ্ধবিরতি না হলে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে ঝুঁকতো ভারত-পাকিস্তান: ট্রাম্প

পেহলগামের সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল, তা এক পর্যায়ে পারমাণবিক যুদ্ধের দিকেও ঝুঁকে পড়েছিল— এমনটাই দাবি করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তার মধ্যস্থতার ফলেই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়েছে, যা না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেত। ট্রাম্প এটিকে তার কূটনৈতিক দক্ষতার বড় সাফল্য হিসেবেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, "পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছিল যে, দু`পক্ষই এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যেখানে পরবর্তী পদক্ষেপ হতে পারতো পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার।" সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প আরও জানান, এই উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ছিল অত্যন্ত জরুরি। তারই উদ্যোগে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতির পথ তৈরি হয়। এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যকার বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ভারত এখন মার্কিন পণ্যের ওপর শতভাগ শুল্ক কমাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। শুধু ভারতই নয়, অন্যান্য অনেক দেশও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি করতে শুল্ক হ্রাসে আগ্রহী বলে জানান তিনি। ট্রাম্প এটিকে তার প্রশাসনের বাণিজ্য নীতির একটি বড় অর্জন হিসেবে দেখছেন। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প ভারতসহ বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করেছিলেন, যা পরে ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়। ট্রাম্প জানান, যুদ্ধ এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছানো এবং বাণিজ্য ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে শক্তিশালী করা— এই দুই ক্ষেত্রেই তার প্রশাসনের সাফল্য বিশ্বে ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=-TPIFPEbF8g

আসছে গতি ফেরানোর বাজেট

আসছে গতি ফেরানোর বাজেট

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের এটিই প্রথম বাজেট। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের প্রায় দেড়যুগ শাসনের অবসানের পর এবার সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী একটি ‘কল্যাণমুখী’ বাজেট প্রণয়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যে বাজেটে সর্বক্ষেত্রে বৈষম্য কমিয়ে এনে একটি নতুন যুগের সূচনা করতে চায় বর্তমান সরকার। বিশেষ করে ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিতে গতি ফেরানোর লক্ষ্যে সব ধরনের পদক্ষেপ থাকবে নতুন বাজেটে। এ লক্ষ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বাড়ানো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা, নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান তৈরি, গ্রামীণ অবকাঠামো পুনর্গঠন, সামাজিক নিরাপত্তায় জোরদার, ধীরে ধীরে ঋণ নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসা এবং অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প গ্রহণ না করার মতো কর্মসূচিতে জোর দেওয়া হয়েছে। আগামী ২ জুন আসছে অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের মাধ্যমে জাতির সামনে উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। অর্থমন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, অর্থনীতিতে গতি ফেরানোর লক্ষ্য নিয়েই এবারের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। বিশেষ করে আমদানি-রপ্তানিতে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেগুলো মোকাবিলায় একটি গাইড লাইন থাকবে নতুন বাজেটে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে স্থায়ী কমিশন গঠন করার ঘোষণা আসতে পারে। এ ছাড়া রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কারোপ, এলডিসি গ্রাজুয়েশন, জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনে প্রকল্প গ্রহণ, বৈশ্বিক যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও নিজদেশের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান ঠিক রাখা, সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের গতি বেগবান করতে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্র্যবিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে উল্লেখযোগ্য সংস্কারের বিষয়গুলোতে নজর দেবে সরকার। সার্বিকভাবে আর্থ-সামাজিকভাবে বৈষম্য কমানোর যে তাড়না থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সূত্রপাত হয়েছিল, তা পূরণে সব ধরনের উদ্যোগ থাকবে বাজেটে। বাজেট সামনে রেখে জুন মাসের মধ্যেই উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে পাওয়া যাবে ৩৫০ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ দিচ্ছে ১৩০ কোটি ডলার। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ সহায়তা পাওয়া যাবে।  বিপুল পরিমাণ এই অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হলে ডলার সংকট দূর হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ ব্যয় করতে পারবে সরকার। এ ছাড়া সরকারের আয় বাড়াতে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে দুটি আলাদা বিভাগ করা হয়েছে। এর ফলে সরকারের আয়কর ও ভ্যাট ও শুল্ক আদায় বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে অর্থনীতিতে যে স্থবিরতা তৈরি হয়েছিল তা কেটে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে ধীরে ধীরে বর্তমান সরকার দেশি-বিদেশি ঋণ নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের দীর্ঘ সময়ে বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে এত বেশি ঋণ নেওয়া হয়েছে যে, সেই ঋণের আসল এবং সুদের অর্থ পরিশোধ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে। এ কারণে ঋণ করে আর কোন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করবে না অন্তর্বর্তী সরকার। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ইতোমধ্যে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বিদেশ থেকে ধার করে টাকা এনে তা দিয়ে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের নীতি নেওয়া হবে না। নতুন অর্থবছরের বাজেটে অত্যন্ত বাস্তব ভিত্তিক বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে ধার করে, টাকা ছাপিয়ে আমরা বাজেট বাস্তবায়ন করব না। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকার বাজেটটা বাস্তবায়ন করবে, এজন্য বিরাট একটা গ্যাপ নিয়ে বাজেট তৈরি করা হচ্ছে না। প্রকল্প, এডিপি বাস্তবায়ন করব অত্যন্ত বাস্তব ভিত্তিতে। এর পরও কিছুটা তো ডেফিসিট (ঘাটতি) থাকবে। সেটা পূরণ করতে নেগোশিয়েট (আলোচনা) করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে প্রজেক্টের ব্যাপারে কথা বলছি, সেটা মোটামুটি এখন সাকসেসফুল হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার কাছে আজ বাজেট উপস্থাপন ॥ অর্থমন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, নতুন অর্থবছরের বাজেট চূড়ান্ত হয়ে গেছে। আজ শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সামনে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এ বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। প্রধান উপদেষ্টা শেষ পর্যন্ত বড় কোনো পরিবর্তন, সংযোজন বা বিয়োজনের নির্দেশনা না দিলে উপস্থাপিত প্রস্তাবিত বাজেটই শেষ পর্যন্ত জাতির সামনে তুলে ধরবেন উপদেষ্টা। তবে ২ জুন বাজেট পেশের আগে আরেক দফা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। ওই সময় সামান্য কিছু পরিবর্তন বা সংযোজন বিয়োজন হতে পারে। এ ছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা খাত এবার ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সময় সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কি ধরনের অনিয়ম, অর্থের অপচয় এবং সুবিধাভোগীদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। এক্ষেত্রে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে সেক্ষেত্রে সুবিধাভোগীদের তালিকা নতুন করে প্রণয়ন করা হতে পারে। এ প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তাসহ এ খাতে অন্তর্ভুক্ত  করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এজন্য নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। এ খাত থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ বেশকিছু প্রকল্প বাদ যাবে। তবে আগামী অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের চলমান আটটি কর্মসূচিতে ভাতার পরিমাণ ও ক্ষেত্রে বিশেষ উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ছে। মা ও শিশু, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, বেদে এবং অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ভাতার পরিমাণ ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। করমুক্ত আয়সীমা বাড়বে ॥ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রায় দুইবছর পর এবার করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর দাবি তুলেছেন। ব্যবসায়ীদের দাবি সমর্থন করে সংগঠনটির প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান সম্প্রতি এনবিআরের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনা সভায় করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আর্কষণ করেন। জানা গেছে, বিভিন্ন মহলের দাবির প্রেক্ষিতে এবার করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হচ্ছে।  এ ছাড়া আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে করপোরেট করের শর্ত শিথিল করা হচ্ছে। শর্ত শিথিল হলেও করপোরেট করের হার কমানো হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের  বেশিরভাগ অর্থনীতি এখনো ব্যাংকের লেনদেনের বাইরে। সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক পরিকাঠামো সম্পূর্ণভাবে ব্যাংকনির্ভর নয়। বড় এবং মাঝারি কোম্পানির ক্ষেত্রে লেনদেনের শর্ত পূরণ করা সম্ভব হয় না।  সেজন্য তারা কর কমানোর সুবিধা নিতে পারছেন না। তাদের ভাষ্য, কোম্পানি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের আয় বা প্রাপ্তি এবং ব্যয় ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংক লেনদেনের সীমারেখা নির্ধারণ করে দেওয়া বাস্তবসম্মত নয়। তা ছাড়া প্রতিষ্ঠানের অনেক ব্যয়কে করের আওতায় ধরা হয়। বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির  ক্ষেত্রে কর ২০ শতাংশ হলেও ক্ষেত্র বিশেষে বেড়ে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ হয়। এ প্রসঙ্গে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, ব্যবসায়ীদের জন্য করপোরেট কর কমানো হলেও কঠিন শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে ব্যবসায়ীদের কোনো লাভ হয়নি। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ লেনদেন এখনও ব্যাংকের বাইরে। যেমন একটি কারখানায় ১ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী আছে। তাদের  বেতন ব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের টিএ, ডিএ বা তাদের পেছনে অন্য যেসব খরচ হয়, সেগুলো নগদে সম্পন্ন হয়। ফলে বড় আকারের এসব লেনদেন ব্যাংকের আওতার বাইরে থেকে যায়। এছাড়া সর্বনিম্ন চাঁদার হার আরও কমিয়ে আনার নতুন বিধান যুক্ত করে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পেনশনযোগ্য বয়স হলে জমাকৃত অর্থ এককালীন তোলার সুযোগ, প্রবাস ও প্রগতি স্কিমে সর্বনিম্ন মাসিক চাঁদার পরিমাণ কমানো, প্রগতি স্কিমে মাসিক সর্বোচ্চ জমার পরিমাণ বাড়ানো, আউটসোর্সিং সেবা চুক্তিতে নিয়োজিত কর্মীদের পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা ও সর্বজনীন  পেনশন স্কিমের ইসলামিক ভার্সন চালুর প্রাথমিক উদ্যোগ নেওয়া ইত্যাদি। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এর প্রতিফলন দেখা যাবে। আগামী অর্থবছর থেকে এসব সুবিধা কার্যকর করবে সরকার। বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে হচ্ছে স্থায়ী কমিশন ॥ বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ রোজার ঈদে বাজারে স্বস্তি ছিল সাধারণ মানুষের। এখন চালের দাম কমে আসায় বাজারে স্বস্তি ফিরে আসছে। সারাবছরই যাতে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে থাকে সেজন্য স্থায়ী কমিশন গঠনের ঘোষণা বাজেটে দেওয়া হতে পারে। নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি ফেরাতে সিন্ডেকটমুক্ত করার দাবি দীর্ঘদিনের। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি চাল, ডাল, ডিম, ভোজ্যতেল, চিনি ইত্যাদি নিত্যপণ্যে সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য নতুন একটি স্থায়ী কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রস্তাবের ভিত্তিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ কমিশনের উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের এ ধরনের উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে ভোক্তাদের সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। এ  প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান সম্প্রতি বলেন, আমরা নতুন কমিশন গঠনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মতামত পাওয়ার পর সব পক্ষকে নিয়ে একটি বৈঠক ডাকা হবে। এর পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের এ ধরনের প্রস্তাবে সরকার যদি সম্মতি দিয়ে থাকে তাহলে এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানায় ক্যাব। তিনি আরও বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে অবশ্যই সংস্কার হতে হবে। তবে শুধু একটি কমিশন করে দিলেই হবে না,  এ সম্পর্কিত আরও যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোকে কার্যকরী করতে হবে।   বাজেটের আকার কমিয়ে বাস্তবসম্মত করা হয়েছে ॥ অন্তর্বর্তী সরকার মনে করে সস্তা বাহবা নিতে বিগত দিনগুলোতে বাজেট ফুঁলিয়ে ফাঁপিয়ে করা হয়েছে। তবে এবার আকার কিছুটা কমিয়ে বাস্তবসম্মত করা হয়েছে। বাজেট শতভাগ বাস্তবায়নের আশা করা করছে বর্তমান সরকার। এ কারণে বাজেট ঘাটতি ধারণযোগ্য পর্যায়ে  রেখে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় গতবারের চেয়ে ছোট বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে অর্থ মন্ত্রণারয়। ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের আকার ঠিক করা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম। নতুন বাজেটের আকার কমলেও পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে বরাদ্দের প্রাক্কলন করা হচ্ছে ৫ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। তবে উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ কমিয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার পরিকল্পনা করা হয়েছে। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) চলতি অর্থবছরের ব্যয়ের পরিকল্পনা ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী বাজেটে যা ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকুচিত মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি ব্যয় কমানো এবং বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য করতেই আকার কমানো হচ্ছে।