ক্রমে কমছে সরকারি খাদ্যশস্যের মজুত। সরকারি গুদামে এখন চাল-গমের মজুত ১২ লাখ টনের কিছু বেশি। মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি। এ কর্মসূচিতে চলে যাবে মজুতের বড় একটি অংশ। চালের বাজারও বাড়তি। মজুত বাড়িয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে তাই ১৬ লাখ টন চাল-গম কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রবিবার (৫ জানুয়ারি) খাদ্যশস্যের সরকারি মজুত ছিল ১২ লাখ ১৬ হাজার টন। এর মধ্যে চাল প্রায় ৮ লাখ টন, বাকিটা গম। ২০২৩ সালের শুরুতে সরকারি মজুত ছিল প্রায় ২০ লাখ টন। ২০২৪ সালের শুরুতে মজুতের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ টনের মতো।
খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, বিগত সরকার শেষের দিকে কোনো চাল আমদানি করেনি। উল্টো ফ্যামিলি কার্ডের আওতায় এক কোটি পরিবারকে চাল বিতরণ করা হয়েছে। সেজন্য বিগত সময়ের চেয়ে মজুত কিছুটা কম। আবার এবারও কর্মসূচির আওতায় ৫০ লাখ পরিবারকে ১৫ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। খাদ্যশস্যের বর্তমান মজুতের একটা বড় অংশ চলে যাবে এ কর্মসূচিতে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, গত অর্থবছরে আসলে সেভাবে চাল আমদানি করেনি সরকার। অন্যদিকে টিসিবির যে এক কোটি ফ্যামিলি কার্ড সেখানে মাসে আমাদের প্রত্যেক পরিবারকে পাঁচ কেজি করে চাল দিতে হচ্ছে। ফিগারটা কিন্তু অনেক বড়। সেজন্য মজুত কিছুটা কমেছে।
বাড়তি চালের বাজার ॥ ঢাকার বাজার ঘুরে দেখা যায়, আমনের নতুন চাল বাজারে এলেও প্রতি কেজি চালের দাম দুই থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত বেড়েছে গত দুই সপ্তাহে। খুচরায় প্রতি কেজি ৬২ টাকার নিচে কোনো চাল মিলছে না। এ দামে যেসব চাল মিলছে, সেগুলো মোটা স্বর্ণা ও পাইজাম। এ দুই জাতের চাল চলতি আমন মৌসুমে বাজারে এসেছে। চালকল মালিকদের দাবি, ধানের দাম বাড়ায় তারা চালের দাম বাড়িয়েছেন। নওগাঁ চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ চকদার বলেন, মোকামে ধান নেই। শুরু থেকে এবার ধানের দাম বেশি। গত এক-দেড় সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি মণে ৭০-৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ধানের দাম বাড়ার কারণে স্বাভাবিক কারণেই চালের দাম বাড়াতে হয়েছে। মজুত বাড়াতে বিদেশ থেকে আমরা চাল ও গম আমদানি করছি। একটার পর একটা জাহাজ আসছে। আমাদের ৮ লাখ টন চাল ও ৮ লাখ টন গম আনার প্রক্রিয়া পাইপলাইনে রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে চালের বড় মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগর, নওগাঁ ও দিনাজপুরে প্রতি মণ স্বর্ণা ধান এক হাজার ৪২০ থেকে এক হাজার ৪৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব এলাকায় প্রতি মণে ধানের দাম গত সপ্তাহের চেয়ে ৫০ টাকা বেড়েছে। যেখানে প্রতি বস্তা চালের দাম একই সময়ে বেড়েছে ২০০-২৫০ টাকা। ওইসব এলাকায় প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০-২ হাজার ৭০০ টাকায়। মজুত বাড়াতে সরকারিভাবে ৮ লাখ টন চাল ও ৮ লাখ টন গম আমদানির প্রক্রিয়া চলমান। এরই মধ্যে চাল ও গম আসতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে বেসরকারিভাবে চাল আমদানি হচ্ছে। আমনে ধান-চাল সংগ্রহও জোরদার করা হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে মজুত ২০ লাখ টনে উন্নীত করা হবে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আমদানির চাল পুরোদমে ঢুকতে শুরু করলে বাজার কমে যাবে। মজুতও ভালো একটা অবস্থানে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্টরা জানান, চালের বাজার অস্থিতিশীল হলে সরকার খোলাবাজারে সুলভমূল্যে চাল বিক্রির (ওএমএস) আওতা ও বরাদ্দ বাড়িয়ে বাজারে স্থিতিশীলতা আনার চেষ্টা করে। এছাড়া খাদ্যবান্ধবসহ অন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে চাল বিতরণ করা হয়। মূলত অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সংগ্রহ ও আমদানির মাধ্যমে মজুত করে সরকার।
খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, সরকার মজুত বাড়াতে বিদেশ থেকে চাল ও গম আমদানির জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ৮ লাখ টন চাল ও ৮ লাখ টন গম আমদানি করা সম্ভব হবে। এরই মধ্যে চাল ও গম আসার প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছে। গত ২৫ ডিসেম্বর ভারত থেকে ২৪ হাজার টন চালবাহী প্রথম জাহাজ এসেছে। ১০ জানুয়ারি ২৭ হাজার টন চাল নিয়ে আসছে আরও একটি জাহাজ। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, ‘মজুত বাড়াতে বিদেশ থেকে আমরা চাল ও গম আমদানি করছি। একটার পর একটা জাহাজ আসছে। আমাদের ৮ লাখ টন চাল ও ৮ লাখ টন গম আনার প্রক্রিয়া পাইপলাইনে রয়েছে। যদি আবহাওয়াগত বা অন্য কোনো সমস্যা না হয় তবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এ চাল ও গম আমাদের কাছে চলে আসবে। সচিব আরও বলেন, ‘মার্চ থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি শুরু হবে। সেখানে চাল যাবে।